সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

পরিচিতি
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন (বা জা ফে-৮)

ভূমিকা:
আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে মানুষকে তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে যতদিন আল্লাহর আইন চালু ছিল ততদিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই আইনের অভাবে বর্তমান সুন্দর এ পৃথিবীর বুকে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। দুনিয়ার মানুষ শান্তির সন্ধানে দিক বিদিক ঘুরছে। জুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার, ব্যভিচার, মারামারি, খুন-রাহাজানি, রক্তপাত দিন দিন বেড়েই চলছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস পৃথিবীবাসীকে গ্রাস করে ফেলছে।

সমাজের কিছু লোক অসহায় শ্রমিকদের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে একদিকে কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে, অপরদিকে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় রোগে-শোকে আহাজারী করে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সাম্রাজ্যবাদী, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজবাদী শক্তি শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তন ও শ্রমিক রাজ কায়েমের মিথ্যা শ্লোগান দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির নামে অসহায় মেহনতি মানুষকে গোলামীর জিঞ্জিরে বন্দি করে রেখেছে। সুবিধাবাদী গোষ্ঠী মালিক ও শ্রমিককে দুই বিপরীত পক্ষ বানিয়ে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে। শুধু তাই নয় মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ বাঁধিয়ে সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। একদিকে শ্রমিক লাশ হচ্ছে, অন্যদিকে তথাকথিত শ্রমিক নেতারা অসহায় মানুষের অগণিত সম্পদ গ্রাস করছে। শ্রমিকদের লাশের উপর পা রেখে তাদেরকে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে। খেটে খাওয়া অসহায় এ শ্রমিক শ্রেণির আহাজারীতে আজ আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠছে।

দেশের অবস্থা:
আমাদের দেশ বাংলাদেশেও একশ্রেণির সুবিধাবাদী স্বার্থপর মহল নিজেদের কুমতলব হাছিলের জন্য লজ্জার মাথা খেয়ে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের জয়গান গাইছে। দেশ স্বাধীন হবার পর মিল কারখানা ঢালাওভাবে রাষ্ট্রীয়করণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জাতীয় অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে আসে। পরবর্তীতে পাইকারীভাবে বিরাষ্ট্রীয়করণের ফলে শ্রমিকেরা বেকারত্বের শিকার হচ্ছে এবং অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

আল্লাহর আইন বাস্তবায়িত না থাকা ও অসৎ নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ এক চরম অশান্তি ও ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে চলছে। কৃষক তার উৎপাদিত দ্রব্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। শ্রমিক তার মজুরি দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারছে না। রোগে, শোকে, অনাহারে তারা দিন কাটাচ্ছে। অথচ একশ্রেণির অসৎ মালিক, কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতা গরিব শ্রমিকদেরকে ঠকিয়ে রাতারাতি কালো টাকার মালিক হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক-কর্মচারীসহ মেহনতি জনতার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। শ্রমজীবী মানুষ আজ এ করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায়।

মুক্তির পথ:
মানব রচিত মতবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও পুঁজিবাদ বা মুক্ত বাজার অর্থনীতি শ্রমিক সমাজ তথা সর্বস্তরের আদম সন্তানের কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। একমাত্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থাই শ্রমিক শ্রেণিসহ গোটা মানবজাতির সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে। জীবনের সকল স্তরে ইসলামী আইন চালু হলেই আবার আমাদের হারানো শান্তি ফিরে আসবে। মানুষের বাঁচার মৌলিক অধিকার ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা একমাত্র ইসলামই দিতে পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তুমি যা খাও অধীনস্তকে তাই খেতে দাও।” “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার মজুরি দিয়ে দাও।” মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে এ দুনিয়ায় আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।

আমাদের কথা:
দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের পরিবর্তে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন এবং মেহনতি জনতার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাজ করছে। ইসলামের বিধান অনুসারে শ্রমিক সমস্যা সমাধানের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ১৯৬৮ সালের ২৩ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন বিশ্বাস করে যে দুনিয়ার এ জীবনই শেষ নয়। মৃত্যুর পর শুরু হবে আখেরাতের অনন্ত জীবন। সে জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। সেখানে এ দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসেব সকলকে আল্লাহর নিকট দিতে হবে। এ জন্য ভাল শ্রমিক হওয়ার সাথে সাথে ভাল মুসলমান হওয়ার চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। তবেই আসবে ইহকালে শান্তি এবং পরকালে মুক্তি ও জান্নাত। অতএব খাঁটি মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত শ্রমিক সমাজের বাঁচার দাবি আদায়ের জন্যে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকা তবে সমবেত হোন এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে জোরদার করুন।

জনশক্তির স্তর:
সংগঠনের জনশক্তির চারটি স্তর:
ক) সাধারণ সদস্য : ফেডারেশনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির সাথে একমত হয়ে যারা সদস্য ফরম পূরণ করে তারা সাধারণ সদস্যভুক্ত হয়।
খ) সক্রিয় সমর্থক : কর্মীদের চারটি কাজের মধ্যে যে কোন একটি কাজ করলেই সক্রিয় সমর্থক হয়।
গ) কর্মী: ১. নিয়মিত বৈঠকাদিতে যোগদান, ২. ইসলামী কাজের রিপোর্ট প্রদান, ৩. ফেডারেশনে সাধ্যমত অর্থ দান। ৪. দাওয়াতি কাজ করা- এ চারটি কাজ করলে কর্মী হয়।
ঘ) সদস্য : আল্লাহর কাছে জান ও মাল বিক্রি করার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে সদস্য হতে হয়।

আবেদন:
তাই আসুন দুনিয়া ও আখিরাতের একমাত্র শান্তি ও মুক্তির পথ ইসলামের জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকাতলে সমবেত হয়ে নির্যাতিত বঞ্চিত মানবতার মুক্তির অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।

৪৩৫, এলিফ্যান্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭
ফোনঃ ৮৩৫৮১৭৭, মোবাইল: ০১৫২৩২৭৫৯৩
Fax: 9355044, E-mail: cpskf@hotmail.com