আমরা মানুষ। সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করাই আমাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সুস্থ, সুন্দর ও আল্লাহভীতিবান্ধব সমাজ গঠন করা আমাদের সকলের কর্তব্য। মানুষ পরস্পরের সাথে কেমন করে কুশল বিনিময় করবে, তাও মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন তাঁর হাবীব রাসুল (সা.) এর মাধ্যমে। হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা কথা শুরু করার আগেই সালাম দিবে।” (তিরমিজি : ২৬৯৯)
সালামের উৎপত্তি
সালাম আরবি শব্দ। যার অর্থ শান্তি। সুতরাং অপর ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার অর্থ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির শান্তি বা কল্যাণ কামনা করা। সালামের উৎপত্তি পৃথিবীতে নয় বরং জান্নাতে। আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) কে পৃথিবীতে পাঠানোর আগেই সালাম আদান প্রদানের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। হাদিসে রাসুলে তার বাস্তবতা খুঁজে পাই। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। নবি (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে বললেন, তুমি যাও, আর ওই যে ফেরেশতাদের একটি দল বসে আছে, তাদেরকে সালাম দাও। আর তারা তোমার সালামের কি জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শোন। কেননা ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম বিনিময়ের নীতি। অতঃপর তিনি তাদের কাছে গেলেন ও বললেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ তারা উত্তরে বললেন ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ ওয়া রাহমাতুল্লাহ শব্দটি বেশি বললেন।” (রিয়াদুস সালেহিন : ৮৫০)
বিভিন্ন ধর্মে অভিবাদনের পদ্ধতি
সালাম বা অভিবাদনের পদ্ধতি বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন রকম। ইয়াহুদিদের ধর্মে, ‘গুড নাইট’, ‘শুভ রাত্রি’ বা ‘শুভ সকাল’ ইত্যাদি বলে অভিবাদন জানানো হয়। হিন্দুদের ধর্মে ‘আদাব-নমস্কার’, খ্রিস্টানরা ‘হ্যালো’ বলে অভিবাদন জানালেও ইসলামে রয়েছে অর্থবহ সুন্দর অভিবাদন পদ্ধতি। আর তা হলো ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’। আমাদের মুসলিম সমাজে কদমবুচিকে সালাম বানানোর প্রচলন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঘরের নতুন বৌ মুখে সালাম না দিয়ে কদমবুচি করেন। যা নিতান্তই ভুল। আমাদের সমাজ থেকে এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া উচিত।
সালাম দেওয়ার পদ্ধতি
আমরা মুসলিম হিসেবে একে অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। তবে স্থান, কাল, পাত্রভেদে সালামের পদ্ধতি ভিন্ন হবে। সালামের সেই ভিন্নতা আমাদের জানতে হবে। স্বাভাবিকভাবে আমরা সালাম দিতে ব্যবহার করি : السلام عليكم ورحمه الله
কোনোস্থানে মুসলিম-অমুসলিম একত্রে থাকলে সালাম হবে : السلام على من اتبع الهدى
কবরস্থানের পাশ দিয়ে যেতে : السلام عليكم يا أهل القبور
কারো ঘরে বা রুমে প্রবেশ করার অনুমতির জন্য : السلام عليكم اادخل
ভুলে অমুসলিমদের সালাম দিয়ে ফেললে সাথে সাথে বলতে হবে : أسترجع سلامي
কেউ যদি সালাম দেয় তাহলেও সালাম হয়ে যাবে : سلام عليكم
মোবাইলে হ্যালো বলার পরিবর্তে সালাম দেওয়া
আমরা অনেক সময় কাউকে সালাম দিলে সে না শুনলে আমরা ‘হ্যালো’ বলে থাকি। আপনাকে সালাম দিয়েছি এমনটি না বলে, আবার সালাম দিতে হয়। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। “নবি (সা.) যখন কথা বলতেন। তখন তা তিনবার বলতেন। যাতে তার কথা বুঝতে পারা যায়। আর যখন কোন গোষ্ঠীর কাছে আসতেন তখনও তিনি তিনবার করে সালাম পেশ করতেন।” (বুখারি : ৯৩)
আমরা অনেক ইসলামিক স্কলারদের দেখি তারা এক ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় السلام عليكم না বলে পুরুষ হলে السلام عَليْكَ আর মহিলা হলেالسلام عليْكِ বলতে বলেছেন। এতে সালামের মর্যাদাকে খাটো করা হয়। এরকম ২/১ টা হাদিস পাওয়া যায়, যা জিবরাইল (আ.) এর পক্ষ থেকে সালামের সময় ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ মানুষকে সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন একবচনের শব্দ ব্যবহার রাসুল (সা.) ও সাহাবাদের কাছ থেকে নেই। সুতরাং শ্রোতা এক বা একাধিক হোক বহুবচন ব্যবহার করে السلام عليكم ورحمه الله বলে সালাম দিতে হবে।
চিঠিতে কেউ সালাম দিলে তার উত্তর وعليكم السلام ওয়ালাইকুমুস সালাম বলে দিতে হবে। কেউ যদি দূত পাঠিয়ে সালাম দিলে তার উত্তরوعليك وعليه السلام ওয়ালাইহিস সালাম দিতে হবে। বধির বা যারা কানে শুনে না তাদের ক্ষেত্রে মুখে বলার সাথে সাথে হাত দিয়েও ইশারা করা যেতে পারে। তবে সালাম ছাড়া হাতের ইশারা করা ইহুদিদের রীতি। তাই এমনটা করা যাবে না।
অন্যান্য ধর্মাবলীদের সালাম দেওয়া ও নেওয়া
সালাম শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত। অমুসলিমদের সালাম দেওয়া যাবে না। তবে আমাদের দেশে অনেক অমুসলিম প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিন্দু হওয়ায় তাদের সম্মান দেখাতে হয়। মুসলিম হিসেবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। তবে একান্তই যদি সালাম না দিলে ক্ষতি আশঙ্কা থাকে, তাহলে “আদাব” শব্দ বলে সম্বোধন করা যেতে পারে। তবে ভুলেও নমস্কার বলা যাবে না। আদাব শব্দটি আরবি ادب থেকে এসেছে। যার অর্থ শিষ্টাচার। আর নমস্কার শব্দের মানে মাথা নোয়ানো। নমস্কার বলা যাবে না। তবে অমুসলিমরা যদি সালাম দেয় তাহলে সালামের পূর্ণাঙ্গ জবাব দেওয়া যাবে না। তখন বলতে হবে وعليكم অর্থাৎ আপনি আমাকে যা বলেছেন আপনাকেও তাই। হাদিসে রাসুল (সা.) থেকে তার উত্তর পাই। হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, “নিশ্চয় নবিজি (সা.) আমাদের বলেছেন, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে কেউ যদি তোমাদের সালাম দেয় তাহলে তোমরা শুধু এতটুকু বলবে, ‘ওয়ালাইকুম’।” (মুসলিম : ৫৪৬৭)
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “সাহাবারা রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আহলে কিতাবরা আমাদের সালাম দিয়ে থাকে আমরা কীভাবে তার উত্তর দিব? তিনি বললেন, তোমরা বলবে ‘ওয়ালাইকুম’।” (মুসলিম, ইফা : ৫৪৬৮)
হযরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, “ ইয়াহুদিরা যে সময় তোমাদের কাউকে সালাম দেয়, তখন তারা বলে ‘আসসামু আলাইকুম’ (তোমাদের মরণ হোক) তখন তুমি বলবে ‘ওয়ালাইকা’।” (মুসলিম : ৫৪৯১)
মূলত অমুসলিমদের সালামের এমন জবাব দেওয়ার কারণ হলো। তারা ‘আসসালামু আলাইকুম’ না বলে এরা বলে ‘আসসামু আলাইকুম’ যার অর্থ হল তোমার মরণ হোক। তাদের মধ্যে কেউ যদি পুরো সালাম দেয় তারপরও পুরো উত্তর দেওয়া যাবে না। ইহুদিদের এমন আচরণ আমরা হাদিসে দেখতে পাই হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। “রাসুল (সা.) এর নিকট কয়েকজন ইয়াহুদি আসল, তারা বলল ‘আসসামু আলাইকুম’ (তোমার মৃত্যু হোক) হে আবুল কাশেম। তিনি বললেন ‘ওয়ালাইকুম’ (তোমাদের উপরও তা)। আয়েশা বললেন, আমি বললাম তোমাদের মৃত্যু ও অপমান হোক। সে সময় রাসুল (সা.) বললেন হে আয়েশা! তুমি অশ্লীলভাষী হয়ো না। আয়েশা (রা.) বললেন, তারা কী বলেছে আপনি কী তা শুনেননি? রাসুল (সা.) বললেন, তারা যা বলেছে আমি কি তা তাদের ফিরিয়ে দেইনি। আমি বলেছি, ‘ওয়ালাইকুম’।” (মুসলিম, ইফা: ৫৪৭৩)
মনে রাখতে হবে কোনভাবেই সাধারণ অবস্থায় অমুসলিমদের আগে সালাম দেওয়া যাবে না। তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন তোমরা ইয়াহুদি ও নাসারাদের আগবাড়িয়ে সালাম করো না। আর তাদের কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে রাস্তার পাশে চলতে বাধ্য করবে। (মুসলিম, ইফা: ৫৪৯৮)
শিশুদের সালাম দেওয়া
শিশুদের সালাম শিখানো ও অভ্যস্ত করা জরুরি। এই শিশুরাই আগামী দিনে জাতিকে পরিচালনা করবে। রাসুল (সা.) শিশুদের দেখলে আগেই সালাম দিয়ে দিতেন, হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একদল বালকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের সালাম দিলেন। (মুসলিম, ইফা : ৫৪৭৮)
আমরা কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সুরেও এমন শুনতে পাই,
“গল্প বলি শুন প্রিয় নবিজির, শ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি এই ধরনীর।
ছোটদের দেখে তিনি মিষ্টি হেসে, সালাম দিতেন আগে ভালোবেসে।।”
মহিলাদের সালাম দেওয়া
মহিলাদের সালাম দেওয়া না দেওয়া মহিলার অবস্থার উপর নির্ভর করবে। মুহরিম মহিলা যাদের বিয়ে করা হারাম। (সুরা নিসা) এরকম নারীদের সালাম দেওয়া জায়েজ। আর যে নারীদের বিয়ে করা যায় অর্থাৎ গাইরে মুহরিম তাদের সালাম দেওয়া জায়েজ নয়। তবে একদম ছোট্ট বালিকা বা বৃদ্ধা মহিলা যাদেরকে দেখলে মনে খারাপ কিছু সৃষ্টি হয় না। তাদের সালাম দেওয়া জায়েজ। অনেকে মনে করেন ফেতনার আশঙ্কা না থাকলে সালাম দেওয়া যাবে। আমরা বলব বর্তমান সময়ে কোনোভাবেই এমন সুযোগ দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, হিজড়াদের থেকেও পর্দা করা ফরজ। তাই তাদেরকেও সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। এক হিজড়া নবি (সা.) এর সহধর্মীনিগণের নিকট প্রবেশ করত। মানুষজন তাকে বুদ্ধি, জ্ঞানহীন মনে করত। নবিজী (সা.) একদিন ঘরে প্রবেশ করলেন। ওই হিজড়াটি রাসুল (সা.) এর এক স্ত্রীর রুমে ছিল। সে যে কোন নারীর দেহের বর্ণনা দিয়ে বলছিল। যখন সম্মুখে অগ্রসর হয় চার ভাঁজ নিয়ে অগ্রসর হয়। আর যখন পিছনে ফিরে যায় তখন আট ভাঁজ নিয়ে ফিরে যায়। অর্থাৎ মহিলার পেটের উপর চারটি ও পিঠের উপর আটটি চামড়ার ভাজ ছিল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, সাবধান! এ তো দেখছি নারী দেহের সব বুঝেশুনে। সে যেন তোমাদের নিকট আর প্রবেশ না করে। আয়েশা (রা.) বলেন তারপর থেকে ঐ হিজড়া থেকে পর্দা করা হত। (মুসলিম, ইফা : ৫৫০৩)। অন্য আরেকটি হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। (মুসলিম : ৫৫২৭)
কে কাকে সালাম দিবে
স্বাভাবিক অবস্থায় সবাই সবাইকে সালাম দিবে। তবে কিছু সুন্দর পদ্ধতি হাদিসে বলে দেওয়া আছে। আমরা রাসুল (সা.) হাদিস থেকে সরাসরি নিতে পারি। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যানবাহনে আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর কম সংখ্যক মানুষ বেশি সংখ্যক মানুষকে সালাম দেবে।” (মুসলিম, ইফা : ৫৪৬১)
একদল মানুষকে একজন সালাম দেওয়া অথবা এক দলের মধ্য থেকে একজন সালাম দিলে হক আদায় হয়ে যাবে। এর ব্যতিক্রম হতে পারবে না। বিষয়টা এমন নয়। বরং স্বাভাবিক পদ্ধতি আমরা উল্লেখ করলাম। সালাম এমনভাবে দিতে হবে যাতে শ্রোতা ভালোভাবে শুনতে পায়। সহিহ বুখারির অপর বর্ণনায় আছে যে, “ছোটরা বড়োদের সালাম দিবে।” (বুখারি: ৬২৩১)
সালামের জবাব
সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও, সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। নির্দেশটি মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। “যখন তোমাদের কেউ সালাম বা অভিবাদন করে, উত্তরে তার চেয়েও উত্তম করে সালাম বা অভিবাদন ফিরিয়ে দাও অথবা তারই অনুরূপ করে ফিরিয়ে দাও” (সুরা নিসা: ৮৬)। যিনি সালাম দিয়েছেন, তাকে শুনিয়েই সালামের জবাব দিতে হবে। না হয় জবাবের ওয়াজিব আদায় হবে না। ভিক্ষুকের সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব নয়। কেননা সে সালাম সওয়াবের উদ্দেশ্যে নয় বরং ভিক্ষার জন্যই দেয়। গাইরে মাহরাম কোন মহিলা পুরুষকে অথবা কোন পুরুষ মহিলাদের সালাম দিলে তা নেওয়া ওয়াজিব নয়। বরং তার সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলতে হবে।
যাদের সালাম দেওয়া যাবে না
এমন কিছু পরিস্থিতি আছে যখন সালাম দেওয়া মাকরূহ। তখন সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নামাজরত ব্যক্তি, প্রাকৃতিক কাজে ব্যস্ত ব্যক্তি, বিবস্ত্র লোক, পাঠদানের ব্যস্ত শিক্ষক, ইকামাত ও আজান অবস্থায় মুয়াজ্জিন, বিচার কাজে ব্যস্ত বিচারক, কুরআন তেলাওয়াতকারী, যিকিরকারী, হাদিস পাঠদানকারী, খুতবা দানকারী এবং শ্রবণকারী, ফিকহ নিয়ে আলোচনায় ব্যক্তি, নেশাগ্রস্থ, খাওয়ারত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে, তবে সালাম দানকারী যদি মনে করেন, সালাম দিলে আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকবে তাহলে সালাম দিতে পারে। ঘুমন্ত ব্যক্তিকে সালাম দিয়ে জাগিয়ে দেওয়া যাবে না। হযরত মিকদাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি স্বীয় দীর্ঘ হাদিসে বলেন, “আমরা নবি (সা.) এর জন্য তাঁর অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতেন এবং এমন ভাবে সালাম দিতেন যে তাতে কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না। এবং জাগ্রত ব্যক্তিদের শুনাতেন। সুতরাং নবি (সা.) অভ্যাসমত সালাম দিলেন যেমন তিনি সালাম দিতেন।” (মুসলিম: ২০৫৫)
সালামের গুরুত্ব
ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালামের মাধ্যমে একের প্রতি অন্যের রাগ-ক্ষোভ দূর হয়ে যায়। অহংকার থেকে বেঁচে থাকা যায়। সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। আমরা সাধারণত ঘরেই বাস করি। আমাদের নিজের অথবা অন্যের ঘরে প্রবেশের সময়ও সালাম দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যার নির্দেশনা দিয়েছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য ঘরে সালাম না দিয়েও অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করো না” (সুরা নূর : ২৭)। “যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।” (সুরা নূর: ৬১)
হযরত ইবরাহিম (আ.) এর নিকট যখন ফেরেশতারা আগমন করল, তখন তাদের মধ্যে সালামের আদান-প্রদান হয়। যার সাক্ষী আল-কুরআন। “তোমার নিকট ইবরাহিমের মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কী? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে তারাও বলল সালাম” (সুরা যারিয়াত : ২৪-২৫)। তার মানে ফেরেশতারা নবিদের কাছে আসলে সালাম দিতেন। আর নবিরাও সালাম দিতেন। সালাম সর্বোত্তম কাজগুলোর একটি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। “এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করল ইসলামের কোন কাজ সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেন, তুমি লোকদের আহার করাবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম করবে।” (বুখারি : ২৭)
রাসুল (সা.) সালামের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে সালামের ব্যাপক প্রচলনের নির্দেশনা দেন। হযরত বারা ইবনে আযেব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুল (সা.) আমাদের ৭টি কাজ করতে আদেশ করেছেন,
১.রোগী দেখতে যাওয়া।
২.জানাজায় অংশগ্রহণ করা।
৩.হাঁচির জবাব দেওয়া।
৪.দুর্বলকে সাহায্য করা।
৫.মজলুমকে সাহায্য করা।
৬.সালাম প্রচার করা এবং
৭.শপথ পূরণ করা। (মুসনাদে আহমাদ : ১৮০৪৩)
বেশি বেশি সালাম ঈমানদার হওয়ার লক্ষণ। আর সালামের মাধ্যমে ঈমান তাজা হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পারিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কী তোমাদের এমন একটি কাজ বলে দেব না ? যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তা হচ্ছে তোমরা পরস্পরে সালাম প্রচার করো।” (তিরমিজি : ২৬৮৮)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল তোমরা সালাম প্রচার কর। ক্ষুদার্থকে খাদ্য দান করো। আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখ। এবং সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (ইবনু মাজাহ : ১৩৩৪)
সর্বোপরি আমরা মুসলিম হিসেবে সালামের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় জাগিয়ে রাখব। আমাদের অনেকেই সালাম দেওয়ার পরিবর্তে সালাম নিতে পছন্দ করি। যা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর বিপরীত। তাই আমরা সালামের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যম সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
লেখক: আহ্বায়ক, বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ।