রামাদান, সিয়াম সাধনা ও কুরআন মাজিদ একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সিয়াম বা রোজা হচ্ছে আল্লাহর হুকুম এবং অন্যতম মৌলিক ফরজ ইবাদত। দ্বীন ইসলামের মৌলিক শিক্ষার মধ্যে ঈমান, সালাত ও যাকাতের পরেই সিয়ামের স্থান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা রোকনের মধ্যে চতুর্থ রোকন হচ্ছে সিয়াম। ইসলাম মানুষের জীবনে যেসব মূল্যবোধের প্রতিফলন কামনা করে, এর বুনিয়াদি ইবাদতগুলোই সেসব মূল্যবোধকে জীবনে দৃঢ়মূল করে তুলতে সাহায্য করে। সিয়াম সাধনাও এর ব্যতিক্রম নয়। রামাদান মাসের মূল কর্মকাÐই হচ্ছে, সিয়াম সাধনা। ইবাদত হিসেবে সিয়ামের স্থান অনেক ঊর্ধ্বে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যে সিয়ামের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। মানব জীবনের সৌন্দর্য সাধনায় সিয়ামের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সিয়ামের অর্থ ও সংজ্ঞা:
‘রোজা’ ফারসি শব্দ। রোজাকে আরবি ভাষায় ‘সাওম’ বহুবচনে ‘সিয়াম’ বলা হয়। কুরআন ও হাদিসে রোজাকে ‘সাওম’ বলা হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন কিছু থেকে বিরত থাকা, বিরত করা, বিরত রাখা, সংযম, কোন কিছু থেকে সংযমী হওয়া, সংযত হওয়া, নিয়ন্ত্রণ, দূরে থাকা, কোন কিছুকে পরিত্যাগ করা, বারণ করা বা ফিরিয়ে রাখা, অবিরাম চেষ্টা সাধনা প্রভৃতি। রোজা মানুষকে পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রাখে, নফসকে বারণ করে এবং শয়তানকে বান্দার কাছ থেকে ফিরিয়ে রাখে বলে এর নাম হচ্ছে ‘সাওম’। তাই হাদিসে সাওমকে ‘ঢাল স্বরূপ’ বলা হয়েছে। যুদ্ধে শত্রুর আক্রমণ থেকে ঢাল যেভাবে মানুষকে রক্ষা করে, রোজাও তেমনি কুপ্রবৃত্তি, সমস্ত অন্যায় কাজ, নফসের তাড়না, ষড়্রিপু ও শয়তানের ধোঁকা থেকে রোজাদারকে বাঁচায়। আর রোজা তাদেরকেই বাঁচায় যারা এর উদ্দেশ্য বুঝে রোজা রাখে।
রামাদান একটি মাসের নাম। হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে পুরো রামাদান মাস ধরে মুসলিমদের উপর সিয়াম সাধনাকে ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয় করা হয়। সিয়াম সাধনায় গুনাহ মাফ হয়। রামাদানের সিয়াম সাধনা রোজাদারকে সবরের অগ্নিদহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে পূত-শুদ্ধ মানুষরূপে গড়ে তুলতে প্রয়াস পায়। রমাদানের রোজা নফসের খায়েশাতকে জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষকে আল্লাহর খাঁটি বান্দাহ বানায়। সোনা যেমন আগুনে পুড়ে খাঁটি হয়ে উঠে, সিয়াম সাধনাও তেমনি মানুষকে পুড়িয়ে ভেতর হতে খাঁটি করে তোলে। এই খাঁটি মানুষ জীবনের প্রতিটি দিক-দিগন্তে তার প্রত্যেকটি চিন্তা ও কর্মে আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করবে, ইসলাম এটিই চায়। তাই এর নাম রামাদান। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্য প্রভাতে আলোর সাদা রেখা প্রকাশের সময় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার, ইন্দ্রিয়তৃপ্তি এবং আল্লাহর মর্জির বিপরীত কথা ও অপ্রয়োজনীয়, অবাঞ্চিত ও অশালীন কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার কঠোর কৃচ্ছ সাধনার নাম রোজা।
আল কুরআনুল কারিমের সম্মানের কারণেই রামাদান মাস সম্মানিত হয়েছে। রামাদানে অবতীর্ণ আল কুরআনের বিধানকে মানুষের সামষ্টিক জীবনধারায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাতিলের ও তাগুতের সকল ব্যবস্থাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বিনাশ সাধন করে আল কুরআনের মহাসত্যকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। রামাদানে অবতীর্ণ কুরআনের শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতা, কলুষতা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, ক্রোধ, কুটিলতা, পরশ্রীকাতরতা, সংকীর্ণতা বিনাশ সাধন করে। উদারতা, ক্ষমা, মহত্ত্ব, মানবকল্যাণ, প্রেম, ভালবাসা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, দানশীলতা, ধৈর্য, কষ্টসহিষ্ণুতা প্রভৃতি মহৎ মানবীয় গুনাবলিকে বিকশিত করে, বিশুদ্ধ করে, পবিত্র ও মার্জিত করে তোলে। মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে আত্মসংযমের মহান শিক্ষায় জীবনকে সুন্দর ও পরিশীলিত করে তোলে।
অর্থনৈতিক জীবনে তাকওয়া ও মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক:
ইসলামী অর্থনীতি নৈতিকতা সমৃদ্ধ কল্যাণ অর্থনীতি। একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতি যদি নৈতিকতা দ্বারা পরিচালিত না হয় তখন এর প্রতিটি ক্ষেত্রে আসন গেড়ে বসে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অব্যবস্থাপনা। আর অর্থনীতির সাথে অন্যান্য খাতগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংযোগ থাকায় ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর। এজন্য দেখা যায়, অসৎভাবে উপার্জিত কালো টাকা ব্যবহার করে দুর্নীতিবাজরা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কায়েম করে দুঃশাসন। নানা অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ডেকে আনে রাষ্ট্রের সর্বনাশ। ধনী-গরিবের, বিত্তবান-বিত্তহীনের ফারাক বেড়েই চলে, শুধু বাড়ে না সমৃদ্ধির সূচক। তাই অর্থনীতিতে নৈতিকতা অবলম্বন শুধু প্রয়োজনীয়ই নয় অপরিহার্যও।
মূল্যবোধের ভিন্নতার কারণে বস্তুবাদী অর্থনীতির দুই শাখা পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রে উৎপাদনের উপকরণ নিয়ে ভিন্ন মতামত লক্ষণীয়। সমাজতন্ত্র যেখানে উৎপাদনের একক কৃতিত্ব কেবলমাত্র শ্রমিককেই দিতে চায় এবং পুঁজির ভূমিকা মাত্রই স্বীকার করে না, পুঁজিবাদ সেখানে উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে পুঁজি, শ্রম, ভূমি ও সংগঠনকে বিবেচনা করে। পুঁজিবাদে পুঁজির পারিতোষিক নিঃশর্ত এবং উদ্যোক্তার পারিতোষিক শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ কারবারে লাভ-লোকসান যাই হোক পুঁজি তার নির্ধারিত সুদ পাবেই। অন্যদিকে যদি উৎপাদনের সকল উপকরণের প্রাপ্য মিটাবার পর এমনকি সরকারকে কর বুঝিয়ে দেওয়ার পর যদি কর পরবর্তী মুনাফা অবশিষ্ট থাকে; তবেই উদ্যোক্তা বা সংগঠন তার অংশ পাবেন। আর যদি কর পরবর্তী মুনাফা শূন্য হয় তবে উদ্যোক্তা তার দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমের বিনিময়ে কিছুই পাবেন না। কোন পুঁজির পারিতোষিক নিঃশর্ত এবং উদ্যোক্তার পারিতোষিক শর্তযুক্ত তার কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন আদৌ অনুভব করে না। পুঁজিবাদ শুধু বাজারের বাস্তবতাকে তুলে ধরে। নৈতিকতা সমৃদ্ধ ইসলামী অর্থনীতি এ ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করে এভাবে যে ইসলাম না সমাজতন্ত্রের আদলে পুঁজিকে একদম অস্বীকার করে শ্রমকে উৎপাদনের একমাত্র উপাদান বলে ঘোষণা দেয়, না পুঁজিবাদের আদলে নিঃশর্ত পারিতোষিক দাবি সমর্থন করে। ইসলাম পুঁজি ও সংগঠন উভয় উপাদানের জন্য শর্তযুক্ত পারিতোষিকের ঘোষণা দেয়। যার অর্থ সকল খরচ মিটিয়ে এমনকি সরকারকে প্রয়োজনীয় কর প্রদানের পর যদি মুনাফা থাকে তবে তা পুঁজি ও সংগঠন বা উদ্যোক্তার মধ্যে চুক্তি অনুসারে বণ্টিত হবে। পুঁজির পারিতোষিক শর্তযুক্ত করে নিঃসন্দেহে ইসলাম ও ইসলামী অর্থনীতি একটি মহৎ কাজ করেছে।
মজুরি নির্ধারণ:
মজুরি নির্ধারণ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজার অর্থনীতির প্রবক্তারা বলেন, বাজার ব্যবস্থা তথা চাহিদা ও যোগানের বাটখারাই নির্ধারণ করবে মজুরির অঙ্ক কত হবে। বাজারে কোন বিশেষ শ্রমের চাহিদা বেশি এবং যোগান অপ্রতুল হলে মজুরির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আবার বিপরীত অবস্থা হলে কম হবে। গার্মেন্টস শিল্পের জন্য বাংলাদেশের মত দেশগুলো উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ার পিছনে সস্তা শ্রমই মুখ্য কারণ, শ্রমের যোগান বেশি বলেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি কম। অর্থনীতির সাধারণ নিয়মেই এই কম মজুরি। তাহলে ন্যূনতম মজুরির যে দাবি বারবার উচ্চারিত হয় তা অবাস্তব নয়। নৈতিকতা সে কথা বলে না। গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও যেহেতু উচ্চ আয়ের লোকদের সাথে একই বাজারে মাছ-তরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে হয়, তাই ন্যায়বাদীরা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে সোচ্চার হন।
মজুরি প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে। সাধারণভাবে অর্থনীতিতে মজুরি নির্ধারণে দুষ্প্রাপ্যতার পাশাপাশি দক্ষতাও একটি বিবেচনার বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। দক্ষতা যার যত বেশি মজুরি বা বেতন তার ততো বেশি হবে। আপাতদৃষ্টে এর মধ্যে কোন দোষ আছে মনে হয় না। কিন্তু অন্য একটি নৈতিক বিবেচনা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সমান দক্ষতার দুজন শ্রমিক বা চাকুরীজীবী। একজনের নিউক্লিয়াস ফ্যামিলি; ধরা যাক, স্ত্রী-দুসন্তান মিলিয়ে চার সদস্যের পরিবার। দ্বিতীয়জনের পরিবার সম্প্রসারিত (ঊীঃবহফবফ)। সদস্য সংখ্যা ৭ জন। স্ত্রী ও দুই সন্তানের সাথে অতিরিক্ত বৃদ্ধ বাবা মা ও একজন বিধবা বোন। এমতাবস্থায় দুইজনের জন্য অভিন্ন মজুরি বা বেতন অর্থনৈতিক সমাধান হলেও নৈতিকতার দাবি দ্বিতীয়জনের জন্য একটুখানি বাড়তি ভাতা। কেননা দ্বিতীয়জন অপার মমতায় তিনজন আয়হীন মানুষের যতœ করে সমাজের বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হালকা করে দিচ্ছেন বলে তাকে একটু সহায়তা-সহযোগিতার বিধান থাকতেই পারে। এখানেও নৈতিকতার বিবেচনা ও সিয়ামের শিক্ষা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানকে আরও পরিপুষ্ট, যৌক্তিক ও কল্যাণবহ করে।
সিয়াম তাকওয়া মালিক-শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ:
ড. ইউসুফ আল কারজাভি লিখেছেন, সমাজে দুই ধরনের মানুষ বিদ্যমান; যারা কাজ করতে পারে এবং যারা কাজ করতে পারে না। যারা কাজ করতে পারে তাদের বাঁচার মতো মজুরি প্রদান, যারা কাজ করতে পারছে না তাদের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাহায্য দরকার। আল্লাহর আইন মেনে চলার জন্যই খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে হবে। আর এ জন্য কাজ করতে হবে। শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। ইসলামের অর্থনৈতিক কর্মসূচি দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য নিশ্চিত করতে চায়। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর মালিক ও শ্রমিক নির্বিশেষে সবাইকে তাই পরিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুমিন জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে অনুগত বিনয়ী মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। বিনয় তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাকওয়া সৃষ্টি করে বিনয়, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির অনুভূতি। এসব বৈশিষ্ট্য মানবজীবনে পরিমিতি আনে। তাকওয়ার দাবি হলো আল্লাহর আদেশসমূহ পুরোপুরি মেনে চলা এবং নিষেধ সমূহ পুরোপুরি পরিহার করা। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁকে ভয় করার হক আদায় করে এবং মুসলিম (আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পনকারী) না হয়ে মরো না।’ (সুরা আল ইমরান: ১০২)
‘তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সম্পন্ন ব্যক্তিরাই আল্লাহর বেশি মর্যাদা সম্পন্ন’ (সুরা আল হুজরাত-১৩)। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)। অর্থনীতিতে তাকওয়ার দাবি হচ্ছে জুলুম, প্রতারণা, অন্যকে ঠকানো ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা। সম্পদ উৎপাদন, বণ্টন ও আবর্তন ইসলামী অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আল্লাহ বলেন, ‘সম্পদ যেন শুধু তোমাদের বিত্তবানদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়’ (সুরা আল হাশর-৭)। ইসলামী অর্থনীতির উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণ। ইসলামের বিধান অনুযায়ী সকল সম্পদের মালিক আল্লাহ। মানুষ এ সম্পদের আমানতদার বা ট্রাস্টি হিসেবে এর সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ব্যাপারে আখেরাতে জবাবদিহি করতে হবে। সকলের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। চাহিদার সীমা আছে, লোভের শেষ নেই। ইসলামের নৈতিক ছাঁকুনি পদ্ধতি মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন পূরণে দেয় ও লোভ নিরুৎসাহিত করে। ইসলাম ব্যক্তিকে তার চাহিদা পূরণে যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাতে নির্দেশনা দেয়।
মানুষের প্রতি দরদ, আর্তমানবতার প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সিয়াম। সিয়ামের মাধ্যমে সম্পদ ও ক্ষমতার কারণে সৃষ্ট ব্যধি থাকে মুমিনদের মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়। হালাল পন্থায় আয়-রোজগার বাড়াতে ইসলাম উৎসাহিত করেছে; কিন্তু সম্পদ আহরণ করতে যেয়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। সিয়াম ব্যক্তিকে আত্মশুদ্ধির পথ দেখিয়ে সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে তাকিদ দেয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির ভূমিকা সমাজে শান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কায়েম করতে না পারলে সিয়ামের লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয় না এবং এর প্রভাবও তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না।
করণীয়:
১.ঈমান, তাকওয়া ও আত্মসমালোচনার সাথে সিয়াম পালন করতে হবে।
২.কাজ-কর্ম, শ্রম, পেশায় নিষ্ঠাবান হতে হবে।
৩.মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হবে সহানুভুতিশীল। সিয়ামের বরকতে উভয়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে।
৪.ন্যায় ও সুবিচারের বিপরীত কাজ করা যাবে না।
৫.দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে। মনোযোগের সাথে কাজ করার মধ্যে আন্তরিকতা এবং ঐকান্তিকতার প্রকাশ ঘটে।
৬.মালিকগণ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে আদল (ন্যায় বিচার) ও ইহসান (দয়া) অনুশীলন করবে।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্যাংকার