সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব এবং প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দের অভাবে পাটশিল্পে কাঙ্ক্ষিত উত্থান তো ঘটছেই না, উল্টো এ শিল্প দিনে দিনে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে রেখে সরকার, পাটকলগুলোর সংকট ও শ্রমিকদের দুর্দশা বছরের পর জিইয়ে রেখে পরিকল্পিত ভাবে পাট কল বন্ধ করে পাটশিল্পকে ধ্বংস করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম।গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় ছাঁটাই করে পাটকল বন্ধ করে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, পাট কল বন্ধ,শ্রমিক ছাঁটাই কোনো সমাধান নয়। শ্রমিকদের ছাঁটাই না করে কীভাবে পাটকলকে লাভজনক করা যায় সে উপায় বের করা দরকার ছিল। প্রতিটি সরকারের লুটপাটের বলি এই পাটশিল্প। শ্রমিকরা বলছেন, ‘লোকসান হয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নীতি নির্ধারণের কারণে।’ এই দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা কখনোই নেয়া হয়েছিল কী?সরকারি পাটকলের উৎপাদনশীলতা কম অথচ উৎপাদন খরচ বেশি। ভরা মৌসুমে পাট কেনা হলে ও উৎপাদিত পণ্য ঠিকমতো বিক্রির ব্যবস্থা করলে মিলগুলোয় কোনো ক্রমেই লোকসান হওয়ার কথা নয়। পাটকলগুলোয় পাট ক্রয় থেকে কারখানা চালানোর নানা স্তরে ব্যাপক দুর্নীতি হয়ে থাকে। কম পাট কিনে বেশি দেখানো, ভেজা পাট কিনে শুকনা পাটের দাম দেওয়া ইত্যাদি নানা দুর্নীতি চলে।তাহলে লোকসানের দায় শ্রমিকদের ওপর চাপানো কেন?
তিনি বলেন, বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হিসেবে না দিয়ে পাটকলের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের জন্য ব্যয় করলে পাটকলগুলোকে লাভজনক করা যেতো। পাটকলগুলো পিপিপি মডেলে চালানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেওয়ার মতোই। যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন ও সময়মতো কাঁচা পাট কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিলে,বিজেএমসির দুর্বল বিপণন ব্যবস্থাপনা জোরদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে কার্যকরী ব্যাবস্থা নিলে সরকারি পাটকলগুলো লাভের মুখ দেখতো।
জনাব শামসুল ইসলাম বলেন , প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের প্রায় ৩ লাখ সদস্য এবং পাটচাষী পরিবারের ৩ কোটি সদস্য পাট ও পাট শিল্পের সাথে যুক্ত। তাদের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের আত্মঘাতি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পাটকলসমূহ আধুনিকায়ন করে কার্যকর, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।