বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।সৎ,যোগ্য ও দক্ষতা সম্পন্ন নেতৃত্বের সংকটের কারণে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিক আন্দোলনকে গতিশীল করতে তৃনমূল পর্যায় থেকে শ্রমিক নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।শ্রমিকদের অধিকার আদায় ও সাংগঠনিক মজবুতি অর্জনে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অধিবেশনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, গোলাম রাব্বানী,লস্কর মোঃ তসলিম, কবির আহমেদ, মজিবুর রহমান ভূইয়া, মহিলা বিভাগের সেক্রেটারী রোজিনা আক্তার প্রমুখ।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাষ্টার শফিকুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান, সহ-সাধারন সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম,গোলাম রসুল খান,শাহজাহান আলী,ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী,এস এম লুৎফর রহমান,অ্যাডভোকেট আলমগীর হুসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিব্বুল্লাহ,কোষাধ্যক্ষ মনসুর রহমান,দফতর সম্পাদক আবুল হাশেম, প্রচার সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আমিনসহ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ।
জনাব শামসুল আরো ইসলাম বলেন, শ্রমজীবী মানুষের সঠিক মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং অধিকার আদায়ে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনের বিকল্প নেই। ইসলামী শ্রমনীতিকে বাস্তবায়ন করতে হলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে শ্রমিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। শ্রমিক জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনে শামিল করতে পারলে যে কোন পরিবতর্ন সাধন করা সম্ভব। আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এই পথহারা শ্রমিকদের মাঝে রাসূল ( সা:) প্রদর্শিত ইসলামী শ্রমনীতির অনিবার্যতা তুলে ধরতে পারি এবং তাদের সুসংগঠিত করে সৎ নেতৃত্ব তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারি তাহলে অান্দোলনকে সফল করা সম্ভব হবে।
কার্যকরী পরিষদের অধিবেশনে নিন্মোক্ত ১২ দফা প্রস্তাবাবলি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়:
১. অধিবেশনে ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় মদদে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে কটাক্ষ করে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় ফ্যান্সের বিতর্কিত ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশ করে শুধু বিশ্ব নবীকেই অপমান করেনি বরং কোটি কোটি মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এজন্য ফ্রান্সকে মুসলিম উম্মাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ড না করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হবে।
২. আজকের এই অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, চলমান কভিড-১৯ করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশের শ্রমজীবি মানুষ চাকুরী এবং কাজ কর্ম হারিয়ে বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের পূর্নবাসন ও চিকিৎসায় সরকারী সহায়তার উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই অধিবেশন দাবী জানাচ্ছে যে, ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা, অসুস্থদের যথাযথ চিকিৎসা এবং বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের কর্মসংস্থানসহ আর্থিক পূর্ণবাসন করতে হবে।
৩.অধিবেশনে ২০২০ সালে ফেডারেশনের নিহত নেতা- কর্মীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়।বিশেষ করে ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি বিশিষ্ট আইনজীবি মরহুম এ্যাডভোকেট শেখ আনছার আলী, সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বৃহত্তর খুলনা বিভাগের ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি মাওলানা এ বি এম হাবিবুর রহমান, সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী আমেনা খাতুন, সিলেট বিভাগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন, বাগেরহাট জেলা সভাপতি শেখ জাকির হোসেন, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার সভাপতি তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সভাপতি জয়নাল আবেদীন, লক্ষীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার কালকিনি ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান, শ্রমিক নেতা শামসুদ্দিন জহির, মতিউর রহমান শিকদার, বরিশাল মহানগরী কোতয়ালী থানা প্রচার সেক্রেটারী সেলিম হাওলাদার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রুকন শাহ আলম মিয়াজীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ ও তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তাদের পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং সবরের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছে।
৪. অধিবেশন গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী ৮,০০০/- টাকা নির্ধারন করা হলেও অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী না দিয়ে বিভিন্নভাবে শ্রমিকদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, দাবি আদায়ের আন্দোলনকে দমনের নামে হয়রানি ও গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে শ্রমিকদেরকে চাকুরীচ্যুত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই অধিবেশন গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমানে গৃহীত কালাকানুন টার্মিনেশন এ্যাক্ট বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করার জোর দাবী জানাচ্ছে এবং ১৬,০০০/- টাকা সর্বনিন্ম মজুরী নির্ধারণ করে মজুরী কমিশন ঘোষনার জোর দাবী জানাচ্ছে।
৫. আজকের এই অধিবেশন চাল-ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে।
৬ আজকের এই অধিবেশন বন্ধকৃত ২৫টি জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের যাবতীয় বকেয়া পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করার জোর দাবী জানাচ্ছে এবং বিএমআরই পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন করে উক্ত ২৫টি জুট মিলসহ বন্ধকৃত সকল কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করার জোর দাবী জানাচ্ছে।
৭.আজকের এই অধিবেশন সকল সরকারী, বে-সরকারী ও গার্মেন্টসসহ সকল শিল্প, কল-কারখানায় শ্রম আইন অনুযায়ী মহিলাদের প্রসূতিকালীন ছুটি ও ভাতা প্রদানসহ নারী শ্রমিকদের সন্তানের জন্য শিশু যত্মাগার স্থাপনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
৮.আজকের এই অধিবেশন হোটেল শ্রমিক ও দোকান কর্মচারীসহ মালিকানা নির্বিশেষে বিরাজমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরিখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরী কাঠামো পূর্ননির্ধারণের ও বাস্তবায়নের জোর দাবী জানাচ্ছে এবং পরিবহন, রিক্শা-ভ্যান, নির্মাণ, কৃষি, চাতাল শ্রমিকসহ সর্বস্তরের শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ভিত্তিক সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করা ও সমাধানের উদ্যোগ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছে।
৯.এই অধিবেশন আইএলও কনভেনশন মোতাবেক অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছে।
১০.এই অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে বলছে যে, পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারলে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা শেষ হবে না। তাই এই অধিবেশন পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান, চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করার জোর দাবী জানাচ্ছে।
১১.আজকের এই অধিবেশন মনে করে যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অগ্রগতি মানে দেশের উন্নতি। তাই বাংলাদেশ রেলওয়েকে দ্রুত আধুনিকায়নের পাশাপাশি ঢাকা-লাকসাম-ঢাকা কর্ড লাইন, দোহাজারী-কক্সবাজার ও বগুড়া, জামতইলসহ সারাদেশে রেলওয়ে সম্প্রসারণ করার জোর দাবী জানাচ্ছে।
১২.কার্যকরী পরিষদের আজকের এই অধিবেশন মনে করে যে, শ্রমজীবি মানুষের প্রকৃত সমস্যার সমাধান কুরআন, সুন্নাহর আইন প্রতিষ্ঠা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষে শ্রমজীবি মানুষসহ সকল স্তরের শ্রমিক জনতাকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকাতলে শামিল হওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছে।