একজন মুমিন কিভাবে দৈনন্দিন জীবন-যাপন করবে, তা শিখতে হবে আল্লাহর রাসুলের আদর্শ থেকে। কেননা তিনি আমাদেরকে জীবন-যাপনের মৌলিক সব কিছুই শিখিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করছি। হযরত সালমান ফারসি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা মুশরিকদের এক ব্যক্তি আমাকে বিদ্রুপ করে বলল, তোমাদের বন্ধু (রাসুলুল্লাহ সা.) তোমাদেরকে সব কিছু শিখাচ্ছেন। এমনকি পায়খানায় বসার নিয়ম কানুন পর্যন্ত। আমি বললাম হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন, আমরা পায়খানায় বসতে কিবলার দিকে মুখ করে না বসি। ডান হাতে ইস্তিঞ্জা না করি। তিনটি পাথর টুকরার কমকে ইস্তিঞ্জার জন্য যথেষ্ট মনে না করি; তবে এতে যেন শুকনো গোবর এবং হাড্ডি না থাকে। (মুসলিম ও আহমদ)।
নিম্নে হাদিসের আলোকে মুমিনের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল:
সব কিছু আল্লাহর নামে শুরু করা: একজন মুমিনের সকল কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা উচিত। যেমন-খাওয়া, দাওয়া, বৈঠক পরিচালনা, লেখা কিংবা বক্তব্য শুরু করা ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “বিসমিল্লাহ তথা আল্লাহর নাম নেওয়া ছাড়া, যেই কাজ করা হয় তা বরকত শূন্য থাকে।” (তাফসীরে ইবন কাসীর)। এই হাদিসের আলোকে জানা যায় যে, বিসমিল্লাহ বলে সকল কাজ শুরু করা সুন্নাত।
নেক আমল সব সময় করার চেষ্টা করা এবং কোন নেক কাজকেই গুরুত্বহীন মনে না করা: নেক কাজের আমল করার অভ্যাস হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কুরআন-হাদিসের আলোকে যা করা নেকির কাজ, তা সব সময় করার চেষ্টা করা মুমিন চরিত্রের অংশ। এই প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহর কাছে সেই আমলই অধিক পছন্দনীয় যা সব সময় করা হয়। যদি তা পরিমাণে কম করা হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)। এই হাদিসের আলোকে জানা যায়; আমরা যেসব নেক আমলের কথা জানি, তা সব সময় করার চেষ্টা করা দরকার। যেমনÑ যিকরুল্লাহ, তিলাওয়াতে কুরআন, নফল নামাজ, নফল রোজা, দান সদকা ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রে কোন নেক আমলকে গুরুত্বহীন ভাবা ঠিক নয়। সকল নেক আমলই গুরুত্বসহ পালন করার চেষ্টা করা উচিত। কোন নেক আমলকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। হযরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবি কারিম (সা.) আমাকে বলেছেন, “নেকির কোন কাজকে নগণ্য মনে করো না। যদির নেকির কাজটি এমন হয় যে তুমি অপর ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে মিলিত হও।” (মুসলিম)। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে নেকির কাজ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মনে হলেও তা গুরুত্বের সাথে করা দরকার। কেননা আমরা জানি না, আল্লাহ আমাদের কোন আমলে বেশি খুশি হন। আল্লাহ তায়ালা একটি কুকুরকে পানি পান করানোর কারণেই; একজন ব্যক্তিকে নাজাত দিয়েছিলেন বলে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই কোন নেক আমলকেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। সাধ্যমত সকল নেক আমল করার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
ডান দিক থেকে শুরু করা: আল্লাহর রাসুল (সা.) পথ চলতে ডান দিকে চলতেন। কিছু খেতে ডান দিক থেকে শুরু করতেন। পোশাক পরিধান করতে ডান দিক আগে পরতেন। খাবার পরিবেশন করতে ডান দিক থেকে পরিবেশন করতেন। পথ চলতে ডান দিকে যিনি থাকতেন তাকে আগে যেতে দিতেন। এইভাবে ডানপন্থি হয়ে জীবন-যাপনের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন।
ডান হাতের ব্যবহার: এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস রয়েছে। হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলে কারিম (সা.) ডান হাত পবিত্রতা অর্জন ও খাবার গ্রহণের জন্য ব্যবহার করতেন আর বাম হাত পায়খানা পেশাব থেকে পবিত্রতা ও কষ্টদায়ক জিনিস দূর করার জন্য ব্যবহার করতেন।” (আবু দাউদ)।
মুমিনের ঘুম: হযরত আবু হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবি কারিম (সা.) রাতের বেলা মুখের নিচে হাত রেখে ঘুমাতেন এবং ঘুমাবার আগে এই দোয়া পড়তেন, “হে আল্লাহ আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরণ করি এবং তোমারই নামে জীবন ধারণ করি।’’ আর ঘুম থেকে জেগে উঠার পর পড়তেন, “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করলেন আর (এভাবে) তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।” হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যখন মানুষ ঘুমায় শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি গিরা লাগায় এবং বলে রাত অনেক দীর্ঘ তাই তুমি ভালভাবে ঘুমাও। যখন কেউ ঘুম থেকে উঠে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তার প্রথম গিরা খুলে যায়। আর যখন অজু করে তখন দ্বিতীয় গিরা খুলে যায়। আর সে যখন নামাজ পড়ে তখন তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায়। তারপর ভাল অবস্থায় সকাল হয়। অন্যথায় খারাপ অবস্থায় সকাল হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)। হযরত জাবের হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলে কারিম (সা.) চিৎ হয়ে একটি পা খাড়া করে তার উপর আরেক পা রেখে শুইতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম)। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে শয়ন করতে দেখে বলেছেন, এরূপ শয়ন করা আল্লাহ পছন্দ করেন না।” (তিরমিজি)।
রাতে ঘুমানোর আগে অজু করা ও দুই রাকাত নামাজ আদায়: একজন ঈমানদার সব সময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করেন। ঘুমানোর আগে অজু করে পবিত্র অবস্থায় ঘুমানো সুন্নাত। হাদিস থেকে জানা যায়; কেউ যদি অজু করে নফল নামাজের ইরাদা করার পর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং ঘুমিয়ে যায়। সে সারারাত জেগে নামাজ পড়লে যে সাওয়াব হতো আল্লাহ তাকে সে সাওয়াব দান করবেন। পবিত্র অবস্থায় ঘুমানো একারণে উত্তম; একজন মানুষ জানে না, ঘুম থেকে সে দ্বিতীয়বার জাগ্রত হতে পারবে কি না। ঘুমের ভিতর যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে অজু করে ঘুমালে তার মৃত্যু পবিত্র অবস্থায় হয়। সে পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর কাছে চলে যায়। আল্লাহ এতে খুব খুশি হন।
রাতের প্রথম প্রহরে ঘুমান ও শেষ রাতে উঠে নামাজ: রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া সুন্নাত। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবি কারিম (সা.) রাতের প্রথম ভাগেই ঘুমিয়ে পড়তেন এবং শেষভাগে জেগে নামাজ আদায় করতেন।” এই প্রসঙ্গে আরও হাদিস রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রাসুলে কারিম (সা.) কে বলতে শুনেছি ফরজ নামাজের পরে, সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে মধ্যরাতের নামাজ।” (আহমদ)। হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামুল লাইল তথা রাতের বেলায় উঠে নামাজ পড়া উচিত। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী আল্লাহর নেক বান্দাদের অভ্যাস; এটা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় এবং গুনাহের কাফফারা স্বরূপ ও মন্দ কাজ থেকে বারণকারী।” (তিরমিজি)। হযরত আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, “যখন কোন মানুষ তার স্ত্রীকে রাতের নামাজ পড়ার জন্য জাগিয়ে দেয় এবং উভয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। তাদের নাম ‘যাকীরীন ও যাকেরাত’ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ যারা আল্লাহর স্মরণকারী তাদের মধ্যে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।” (আবু দাউদ ও ইবন মাযাহ)।
তাহাজ্জদুদের সময় উঠে আল্লাহর রাসুল মিসওয়াক করতেন: হযরত আবু হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবি কারিম (সা.) যখন রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা মুখ পরিষ্কার করতেন।” এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস পেশ করছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি এক রাত রাসুলে কারিম (সা.) এর ঘরে ঘুমান। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং কুরআনের এই আয়াত সুরার শেষ পর্যন্ত তিলওয়াত করেন; “পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন।’’ (আল ইমরান ১৯০-১৯২)।
ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন যে, রাসুলে কারিম (সা.) এশার নামাজ পড়ে তাঁর ঘরে আসতেন এরপর চার রাকাআত নামাজ আদায় করতেন এবং অতঃপর ঘুমিয়ে পড়তেন। এরপর মধ্যরাতের কিছুক্ষণ আগে বা পরে ঘুম থেকে জাগতেন। ঘুম থেকে জেগে হাত দ্বারা মুখ মুছে নিতেন এবং সুরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। তারপর মিসওয়াক ও অজু করে দুই রাকাআত করে করে আট রাকাআত নামাজ পড়তেন। এরপর বিতরের নামাজ আদায় করে আবার ঘুমিয়ে পড়তেন। ফজরের নামাজের আজান দেওয়া হলে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে মসজিদে যেতেন এবং ফজরের নামাজ আদায় করতেন। তিনি কখনও অজু করতেন আবার কখনও অজু করতেন না। কেননা তাঁর চোখ ঘুমালেও তাঁর অন্তর জাগ্রত ছিল। এই কারণে তিনি উপলব্ধি করতেন যে অজু ভঙ্গ হওয়ার মত কোন কিছু ঘটেনি। আবার কখনও তিনি গোসল করতেন।
মুয়াজ্জিন ফজরের আজান দিলে নামাজের জন্য বাহির হতেন এবং নিম্নের দোয়া পড়তেন: “হে আল্লাহ আমার কলবে নূর দাও। আমার জবানে নূর দাও। আমার শ্রবনশক্তিতে নূর দাও। আমার দৃষ্টিশক্তিতে নূর দাও। আমার পিছনে নূর দাও। আমার সামনে নূর দাও। আমার উপরে নূর দাও। আমার নিচে নূর দাও।”
রাতে আসমানের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর গুণকীর্তন করা সুন্নাত: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) বিছানায় শোয়া এক ব্যক্তিকে দেখলেন; যিনি বিছানা থেকে উঠার পর নক্ষত্ররাজি ও আসমানের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একজন সৃষ্টিকর্তা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বললো হে আল্লাহ আমাকে মাফ করুন। রাসুল (সা.) বলেন, “আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।”
ভোরবেলা কুরআন তিলাওয়াত করা: হযরত আবু হুরায়রা বলেন, নবি কারিম (সা.) থেকে ইরশাদ করেছেন, “ভোরবেলার কুরআন তিলাওয়াতে সবসময় সাক্ষী থাকে। রাতের ও দিনের বেলার ফেরেশতারা এটার সাক্ষী থাকে।” (তিরমিজি)।
প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ: আল্লাহর রাসুল (সা.) বাম পা আগে দিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করতেন এবং ডান পা আগে দিয়ে টয়লেট থেকে বের হতেন। টয়লেটে প্রবেশের সময় দোয়া পড়তেন। হযরত যায়েদ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “পায়খানার স্থানসমূহ জিন ও শয়তানদের উপস্থিতির স্থান। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যাবে তখন সে যেন এই দোয়া পড়ে, হে আল্লাহ! স্ত্রী-পুরুষ মানুষ ও জ্বিনের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।” (আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ)। এই প্রসঙ্গে হযরত আলী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শয়তানের চক্ষু ও আদম সন্তানের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় যাবে তার (মনে মনে) বিসমিল্লাহ বলা।” এখানে বিসমিল্লাহ পড়া মানে হল আউযু বিল্লাহ ও বিসমিল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট দোয়া পড়া। পেশাব পায়খানা করার পর এই দোয়া পড়া সুন্নাত “সেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দিলেন এবং আমাকে নিরাপদ করলেন।” কোন গর্তে পেশাব করতে আল্লাহর রাসুল নিষেধ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সারজাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউই যেন কোন গর্তের মধ্যে পেশাব না করে।” (আবু দাউদ, নাসায়ী)। গর্তের মধ্যে পেশাব করতে নিষেধ করার কারণ হচ্ছে এতে কোন বিষাক্ত প্রাণী থাকতে পারে। উত্তপ্ত প্রস্রাবে সে বিরক্ত হয়ে অতর্কিত দংশন করতে পারে বা বিষাক্ত গ্যাস বাষ্প নিক্ষেপ করতে পারে। তাছাড়া প্র¯্রাবে গর্তের প্রাণির কষ্ট হবে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময় অন্যের দৃষ্টির আড়ালে থাকা উচিত। এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস প্রণিধানযোগ্য। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য যায়, সে যেন অন্যের দৃষ্টির আড়ালে থাকে।” (আবু দাউদ)। এই প্রসঙ্গে হযরত আনাস থেকে আরও একটি হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবি কারিম (সা.) যখন পেশাব-পায়খানা যাওয়ার সময় ইচ্ছা করতেন; তখন জমিনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাপড় উঠাতেন না।” (তিরমিজি)। এই হাদিস থেকে জানা যায় নি®প্রয়োজনে একাকী অবস্থায়ও সতর খোলা ঠিক নহে।
পেশাব পায়খানা করার সময় কথাবার্তা বলা উচিত নয়। রাসুলে কারিম (সা.) দাঁড়িয়ে পেশাব করা নিষেধ করেছেন। হযরত উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবি কারিম (সা.) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখে বললেন, “হে উমর! দাঁড়িয়ে পেশাব করবে না।” এরপর আমি দাঁড়িয়ে পেশাব করি নাই। (তিরমিজি)।
প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষে অজু করা সুন্নাত: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবি কারিম (সা.) যখন পায়খানায় যেতেন তখন আমি তাঁর জন্য লোটা অথবা বালতি ভরে পানি নিয়ে যেতাম। তিনি তা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন, অতঃপর হাত খানা মাটির উপর মুছতেন। এরপর আরেক পাত্র পানি আনতাম। উহার দ্বারা তিনি অজু করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায় যে, “রাসুলে কারিম (সা.) গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ উহা জিনের খাদ্য।” (তিরমিজি)। রাসুলে কারিম (সা.) কিবলামুখী হয়ে পেশাব পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। হযরত আবু আইউব থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন যখন তোমরা পায়খানায় যাবে তখন কিবলাকে সম্মুখে করবে না এবং পিছনেও করবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা: পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। তাই সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করা দরকার। এই সম্পর্কে কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিম্নে পেশ করছি:
অজু করা: অজুর ফজিলত অনেক বেশি। এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করছি হযরত উসমান ইবনে আফফান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অজু করে এবং সুন্দরভাবে অজু সম্পাদন করে তার শরীর থেকে পাপরাশি দূরীভূত হয় যেই পর্যন্ত তার নখ দ্বারা পাপরাশি বের হয়।” (মুসলিম)। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির কাছে রহমতের ফেরেশতা আসে না। কাফেরের দেহ, খালুকের সুগন্ধি ব্যবহারকারী এবং নাপাক ব্যক্তি যতক্ষণ না অজু করে।” (আবু দাউদ)। খালুক হচ্ছে এক প্রকারের সুগন্ধি। এটা শুধুমাত্র পুরুষের জন্য নিষেধ। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তখন সে যেন নিজের হাত পানির পাত্রে না ডুবায় যে পর্যন্ত না উহা তিনবার ধৌত করে। কেননা সে জানে না, ঘুমের মধ্যে তার হাত কোথায় ছিল।” (বুখারী ও মুসলিম)। এই সম্পর্কে আরেকটি হাদিস হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তখন সে যেন তিনবার নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেলে। কেননা শয়তান নাকের বাঁশির ভিতরে রাত্রি যাপন করে।” (বুখারী ও মুসলিম)।
চলবে……………
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক