বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেছেন, মাতৃভাষায় কথা বলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার দান। আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিটি জাতিকে কথা বলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষা দিয়েছেন। মানুষ তার মাতৃভাষায় যতটা সহজে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে অন্য ভাষায় তা পারে না। বাংলা ভাষা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের ভাষা। আমরা এই ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে অন্তরে প্রশান্তি পেয়ে থাকি। দুঃখজনক হলেও সত্য ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী অন্যায়ভাবে এ অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষার ওপর আঘাত হেনেছিল। তারা আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। উর্দুকে বাংলাভাষী মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে দেশের আমজনতা রাজপথে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর দম্ভ অহংকার সেদিন এদেশের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে চূর্ণ করে দিয়েছিল। শাসকের বুলেটের আঘাতে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অনেকে সেদিন শাহাদাতবরণ করেছিলেন। তাদের অধিকাংশ ছিল শ্রমিক। মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। একই সাথে ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতির গৌরবজ্জ্বল রক্তিম ইতিহাস। আজকের এই দিনে আমরা তাদের আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শহীদদের আত্মত্যাগকে কবুল করুন।
তিনি আজ বংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তর কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোআ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মো. মহিব্বুল্লাহ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আতিকুর রহমান এর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগরী সহ-সভাপতি মিজানুল হক, মহানগরী কার্যনির্বাহী সদস্য হামিদুর রহমান প্রমুখ।
অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ভাষা বৈচিত্র আল্লাহর অনুপম নিদর্শন। আমাদেরকে পৃথিবীর সকল ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং একই সাথে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নিজেদের উজাড় করে দিতে হবে। খুব দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ১৯৫২ সালে আমরা উর্দুকে রুখে দিতে পারলেও আজকের প্রজন্ম আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত অবজ্ঞা করছে। পাশর্^বর্তী দেশের হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে আজকের শিশুরা হিন্দিতে কথা বলছে। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ তাদের সন্তানদের বাংলা না শিখিয়ে ইংরেজি শিখাতে বেশি আগ্রহী। এটি বাংলা ভাষা ও শহীদদের প্রতি স্পষ্টত্ব অবজ্ঞার সামিল। এখনো আমাদের দেশে অফিস আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে চালু করা যায়নি। এটি জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা।
হারুনুর রশিদ খান বলেন, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ শ্রমিক। যাদের অধিকাংশ শিক্ষার মহান আলো থেকে বঞ্চিত। অনেক শ্রমিক বাংলা লিখতে ও পড়তে পারে না। অনেক শ্রমিক নিজের নামটুকু লিখতে পারে না। ফলে অনেকক্ষেত্রে বাংলা লেখা পড়তে না পারার কারণে শ্রমিকরা মালিকপক্ষ দ্বারা ঠঁকে যায়। ঠিকভাবে দস্তখত করতে না পারার কারণে শ্রমিকের বেতন ভাতা আরেকপক্ষ উঠিয়ে নিয়ে যায়। ভাষার মাসে আমাদেরকে সকল শ্রমিকদের বাংলা লিখতে ও পড়াতে সহযোগিতা করাতে হবে। শ্রমিকের সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করতে হবে। শ্রমিকের সন্তানরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে এই ধারা আর চলতে দেওয়া যাবে না।