বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য মহান জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখান করে বলেছেন, এই বাজেট অতীতের ন্যায় গতানুগতিক বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে হতদরিদ্র ও নিম্মবিত্ত শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে না। দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ ক্ষুদ্র শিল্পের সাথে জড়িত। এই সকল মানুষের জন্য বাজেটে নতুন কিছু রাখা হয়নি। অথচ করোনার এই মহামারীর সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো জন্য শ্রমিক বান্ধব বাজেট পেশ করা উচিত ছিল।
জনাব শামসুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ইতিহাসের এটি সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করা হলেও এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে দেশের বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা মতামত দিয়েছেন। মূলত স্বজনপ্রীতি ও স্বজন তোষণের জন্য এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। যে সকল হতদরিদ্র, দিন আনে দিন খায় ও অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে সকল শ্রমিকরা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ফলশ্রæতিতে দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বাজেট থেকে কোন প্রকার লাভবান হচ্ছে না। আমরা ভেবেছি সরকার বর্তমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সরকার আবারও আমাদের একরাশ হতাশা প্রস্তাবিত বাজেটে উপহার দিয়েছে।
জনাব ইসলাম বলেন, দেশের এক শ্রেণীর মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষদের দিনের পর দিন ঠকিয়ে আসা হচ্ছে। এইভাবে একটি দেশের অর্থনীতি চলতে পারে না। এ মুহূর্তে দেশের নিম্ম আয়ের মানুষকে বাঁচাতে তাদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মহীন মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করার পাশাপাশি কর্মহীনদের জন্য প্রণোদনা দিয়ে কর্মের সৃষ্টি করার জন্য বিশেষ বরাদ্ধ রাখা উচিত ছিল। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী যেন দেশের হতদরিদ্র মানুষদের কথা ভুলে গিয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ এক শ্রেণীর মানুষের কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছে। এই শ্রেণীর কাছে আজ দেশ ও জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছে। অর্থমন্ত্রী এই শ্রেণীধারা ভাঙতে কোন উদ্যোগ নেননি। ফলে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে গরিব থেকে আরও গরীব হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের তিন কোটির অধিক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে।
শামসুল ইসলাম বলেন, সরকার একের পর এক মেগা প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র জনগণকে উপোস রেখে উন্নয়নের নামে এই সকল প্রকল্পে দুর্নীতির উৎসব চলছে। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যা বরাদ্ধ দিয়েছে তা ইতোমধ্যে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে। প্রায় ছয় কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্ধ মাথাপিছু ১০০/২০০ টাকাও পড়বে না। করোনা ভাইরাসে দেশের স্বাস্থ্যখাত বিপর্যস্ত। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠীরাই চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। সেই স্বাস্থ্যখাতেও সবচেয়ে কম বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এখানে জিডিপির অন্তত ৩ শতাংশের ওপর বরাদ্ধ রাখা দরকার ছিল।
শামসুল ইসলাম বলেন, দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ক্রমশভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই ধারা রোধ করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। দেশের পোশাকসহ সকল শ্রমিকদের জন্য রেশন, বিনামূল্যে চিকিৎসা, স্বল্পমূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা রাখা এই মুহুর্তের জন্য জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকার এত বড় বাজেট দিলেও দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল রাখছে তাদের জীবনমান উন্নয়নের কোন চেষ্টা করছে না। যা সত্যিই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল, চিনিকল, বস্ত্রকল গুলো ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করে দিয়ে অসংখ্য শ্রমিককে কর্মহীন করে রাখছে। এই সকল শ্রমিকদের শতশত কোটি টাকা বছরের পর বছর বকেয়া রয়ে গেছে। যা এই বাজেটেও পরিশোধের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে যেকোন সময় শ্রমিকরা ধৈর্যহারা হয়ে আবারও বকেয়াা আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে আসতে পারে। দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধ করার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরীর বিকল্প নেই। কিন্তু দক্ষ জনশক্তি তৈরীর করার জন্য সরকার কোন বরাদ্ধ রাখেনি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় করতে গিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। মোট বাজেটের এক তৃতীয়াংশের বেশী ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। যা বৈদেশিক কিংবা আভ্যন্তরীন সোর্স থেকে ঋণ নিয়ে পূরণ করতে হবে। বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয়। তাই জনগণের স্বার্থ বাদ দিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের তাবেদারী করে যাচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহির অনুভূতি না থাকায় ক্ষমতাশীনরা নিজেদের পকেট ভারীর করার কাজে বেশী মত্ত। আমরা বাংলাদেশের মেহনতি শ্রমিক সমাজের পক্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখান করলাম।
জনাব শামসুল ইসলাম সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অবিলম্বে এই বাজেট জাতীয় সংসদ থেকে প্রত্যাহার করুন। পুনরায় দেশের মানুষ কথা চিন্তা, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে শ্রমিক বান্ধব বাজেট পেশ করুন। দেশের শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলে কোন উন্নয়ন দেশের কাজে আসবে না। দল-মত নির্বিশেষে বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে নতুন বাজেট প্রণয়ন করুন। অন্যথায় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও জীবন জীবিকা রক্ষার জন্য আমরা শ্রমজীবী মানুষদের সাথে নিয়ে আগামী দিনে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবো।