১. প্রশ্ন: ট্রেড ইউনিয়ন কাকে বলে? কত প্রকার?
উত্তর: ট্রেড ইউনিয়ন বলতে, শ্রম আইন মোতাবেক গঠিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত মালিক বা শ্রমিকদের কোন সমিতি বা সংঘ যেটি গঠিত হয়েছে মূলত মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে বা শুধু মালিকদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করতে বা যেকোনো ব্যবসা অথবা বাণিজ্য পরিচালনার উপর নিয়ন্ত্রক শর্ত তৈরি বা আরোপ করার জন্য কোন সংগঠন। সহজ ভাষায় শ্রমিক-মালিক, শ্রমিক-শ্রমিক, মালিক-মালিক এর সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত যে সংগঠন, তা হল ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। শ্রম আইনের ধারা ২ (১৫) ট্রেড ইউনিয়ন অর্থ ত্রয়োদশ অধ্যায়ের অধীন গঠিত ও রেজিস্ট্রিকৃত শ্রমিকগণের বা মালিকগণের ট্রেড ইউনিয়ন এবং কোন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
দেশে ৪ ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। যথা-
১. বেসিক ইউনিয়ন। বেসিক ইউনিয়ন ২ ধরনের। ১. প্রাতিষ্ঠানিক ২. অপ্রাতিষ্ঠানিক/প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ।
২. পেশাভিত্তিক ফেডারেশন/ক্রাফট ফেডারেশন। একই প্রকারের শিল্পে বা পেশায় কমপক্ষে ৫টি বেসিক ইউনিয়ন মিলে পেশাভিত্তিক ফেডারেশন গঠিত হয়।
৩. জাতীয় ফেডারেশন। বিভিন্ন পেশার ২০ বা ততোধিক ট্রেড ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনকে জাতীয় ফেডারেশন বলা হয়। ৪. কনফেডারেশন। ১০টি জাতীয় ফেডারেশনের সমন্বয়ে কনফেডারেশন গঠিত হয়।
২. প্রশ্ন: মালিকপক্ষ কি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারে?
উত্তর: শ্রমিকদের ন্যায় মালিকগণও ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। শ্রম আইনের ১৭৬ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, মালিক ও মালিকের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে কোন পার্থক্য ছাড়াই সকল মালিককে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র সাপেক্ষে তাদের নিজস্ব পছন্দের ট্রেড ইউনিয়নে যোগদানের অধিকার থাকবে।
৩. প্রশ্ন: ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে কতভাগ শ্রমিকের ডি-ফরম পূরণ করতে হয়?
উত্তর: ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে মহানগরীর অঞ্চল, থানা, উপজেলা ও জেলায় মোট শ্রমিকের ৩০ শতাংশের ডি-ফরম পূরণ করতে হয়। তবে ২০১৮ সালের শ্রম আইন সংশোধন করে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ডি-ফরম পূরণ করলে হবে।
৪. প্রশ্ন: কোন প্রতিষ্ঠানের ২০ ভাগ শ্রমিক মহিলা থাকলে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটিতে কত শতাংশ মহিলা শ্রমিক থাকবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৭৬ (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা হবে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রম শক্তি বা সদস্যের শতকরা ২০ ভাগ মহিলা থাকলে সেক্ষেত্রে ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটিতে ১০ শতাংশ মহিলা থাকবে।
৫। প্রশ্ন: ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কোথায় কাগজপত্র জমা দিতে হয় এবং প্রতিষ্ঠানে বা প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে কতটি ইউনিয়ন করা যায়?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৭৮ (১) বলা হয়েছে কোন ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য দরখাস্ত স্থানীয় শ্রম পরিচালকের অথবা এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পেশ করতে হবে। শ্রম আইনের ১৭৯ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে যে, কোন প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে কোন সময়ই ৩ এর অধিক রেজিষ্ট্রেশনকৃত ট্রেড ইউনিয়ন থাকবে না।
৬. প্রশ্ন: শ্রম অধিদপ্তর যদি কোন ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন না দেয় তাহলে কতদিনের মধ্যে কোথায় আবেদন করতে হবে?
উত্তর: বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৭৯ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী উপধারা ৩ এর অধীন শ্রম পরিচালক কর্তৃক কোন ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন প্রদান না করেন তাহলে উক্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে আপিল করতে হবে এবং এ বিষয়ে শ্রম আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
৭. প্রশ্ন: ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য বা কর্মকর্তা কারা কারা হতে পারবে না?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৮০ ধারায় বলা আছে, এই ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি নৈতিক স্থলজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত হলে অথবা ধারা ১৯৬ (২) (ঘ) বা ধারা ২৯৮ এর অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন এবং এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির মুক্তি লাভের পর দুই বছর সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য নির্বাচিত বা থাকবার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। (১ উপধারার ক দফা)
আবার যে প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানে তিনি শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত বা কর্মরত না থাকেন তাহলে সেই ব্যক্তি উক্ত প্রতিষ্ঠানের ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবেন না। ১৮০ ধারার শেষাংশে বলা হয়েছে যে, উপধারা (খ) এর কোন কিছুই কোন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
৮. প্রশ্ন: ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন না থাকলে কার্যক্রম চালানো যাবে কি? রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া কার্যক্রম চালালে কোন শাস্তির বিধান আছে কী?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৯২ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রিকৃত না হলে অথবা রেজিষ্ট্রি বাতিল করা হলে ১৯১ (২) এ বিধান সাপেক্ষে, উহা ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে কাজ করতে পারবে না।
১৯১ (২) উপধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে উপধারা (১) এর অধীন কোন আপিল দায়ের করা হয়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নকে, আপিল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উহার কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।
রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম চালালে শ্রম আইনের ২৯৯ ধারায় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। কোন ব্যক্তি অ-রেজিষ্ট্রিকৃত অথবা রেজিষ্ট্রিশন বাতিল হয়েছে এমন কোন ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি সংক্রান্ত কোন কর্মকাণ্ড ব্যতীত, অন্য কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিলে অথবা অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্তরূপ কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণের জন্য উৎসাহিত বা প্ররোচিত করিলে, অথবা উক্তরূপ কোন ট্রেড ইউনিয়নের তহবিলের জন্য সদস্য চাঁদা ব্যতীত অন্য কোন চাঁদা আদায় করিলে, তিনি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
০৯. প্রশ্ন: দ্বৈত সদস্য কী? দ্বৈত সদস্য হওয়ার শাস্তি কত ধারায় বলা হয়?
উত্তর: দ্বৈত সদস্য বলতে একই সময় ২টি ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়াকে বুঝায়। শ্রম আইনের ১৯৩ ধারায় দ্বৈত্য সদস্য পদের উপর বাধার কথা বলা হয়েছে। একই সময়ে কোন মালিক অথবা কোন শ্রমিক একই প্রতিষ্ঠানের একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হতে বা থাকতে পারবে না। শ্রম আইনের ৩০০ ধারায় দ্বৈত সদস্য হওয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কোন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে বা থাকলে, তিনি এক মাস কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
১০. প্রশ্ন: একটি ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন কী কী কারণে বাতিল হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ১৯০ ধারায় ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের কথা বলা হয়েছে। ১ উপধারার অন্য বিধান সাপেক্ষে শ্রম পরিচালক আদালতে দরখাস্তের মাধ্যমে কোন ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন নিম্নলিখিত কারণে বাতিল করতে পারবেন।
ক. রেজিষ্ট্রি বাতিলের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দরখাস্ত করে।
খ. উহার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়।
গ. উহা প্রতারণা অথবা কোন তথ্যের মিথ্যা বর্ণনার মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি হাসিল করে থাকে।
ঘ. বিলুপ্ত।
ঙ. উহা কোন অসৎ শ্রম আচরণ করে থাকে।
চ. উহার সদস্য সংখ্যা এই অধ্যায়ের অধীন প্রয়োজনীয় সংখ্যার নিচে নেমে যায়। অথবা
ছ. উহা এই অধ্যায় বা কোন বিধির বিধান লঙ্ঘন করিয়া থাকে।