বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান আজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত হু হু করে বেড়েই চলছে। করোনার এই মহামারীর সময় শ্রমজীবী মানুষরা কর্ম হারিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েছে। করোনার এই সময় বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের দেশে। সরকারের ছত্রছায়ায় একটি কুচক্রী মহল শ্রমজীবীসহ সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত যোগান থাকা সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমজীবী মানুষদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলমান ঊর্ধ্বগতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের দেশে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ শ্রমিক। তাদের যা উপার্জন তা দিয়ে করোনা মহামারীর পূর্বে সংসার চালানো মুশকিল ছিল। করোনার এই সময় প্রতিটি শ্রমিকের আয় কমে গেছে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত। ঠিক এই সময় এসে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা শ্রমিকদের জন্য উদ্বেগজনক। নিম্ম আয়ের ও দিনে এনে দিন খাওয়া শ্রমিকদের আয়ের পুরো অংশ চলে যাচ্ছে ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে। বাসা ভাড়া, স্বাস্থ্য চিকিৎসা খাতে ব্যয় করার মত অবশিষ্ট অর্থ তাদের থাকছে না। চাল, ডাল ও তেল হতে শুরু করে এমন কোন দ্রব্য আজ বাজারে পাওয়া যাবে না যার দাম বৃদ্ধি পায়নি। এই ঊর্ধ্বগতি শ্রমিকদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। জিনিসপত্রের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে শ্রমজীবীসহ সাধারণ মানুষদের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এখন প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় দেখা যাচ্ছে নিম্ম আয়ের মানুষের পাশাপাশি সমাজের মধ্যবিত্ত মানুষরা টিসিবির পণ্যের জন্য ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চলমান ঊর্ধ্বগতি দেশের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেলেও সরকারের টনক নড়ছে না। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে অযাচিত কথা বলে মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীদের অদ্ভুত সব যুক্তিতে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা আশকারা পেয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য অবৈধভাবে মজুদ করে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কালোবাজারী ও অবৈধ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দেশের সকল বাজারে একই মূল্য করার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা অবৈধভাবে নিত্যপণ্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ প্রতিটি খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে বোবা কান্না চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভে ফুঁসছে নিম্ম আয়ের থেকে মধ্যবিত্ত মানুষরা। এখনই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অচিরে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে। অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের চলমান ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে নিম্ম আয়ের খেটে মানুষদের স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রদান করতে দাবি জানাচ্ছি। যে সকল শ্রমিকরা কর্মহীন তাদের কর্মসংস্থান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগান দিতে হবে। কর্মঅক্ষম ও কর্মক্ষেত্রে আহত পঙ্গুত্ববরণকারী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ভাতা দিতে হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সকল সেক্টরে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন বর্তমান বাজারের আলোকে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ রেশনিং কার্ডের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।