বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত সর্বস্তরের শ্রমজীবী ভাই-বোনসহ দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আজ এক যৌথ শুভেচ্ছা বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদুল আজহা ত্যাগ-তিতীক্ষার এক ঐতিহাসিক অনুপম দৃষ্টান্ত। আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, পাপ-পঙ্কিলতা পরিত্যাগ করে মনের পশুত্বকে কোরবানি দেওয়ার নাম ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার শিক্ষা আমাদেরকে সকল প্রকার জুলুম-শোষণের মূলোচ্ছেদ করে তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হয়ে একটি আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করতে উজ্জীবিত করে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদুল আজহার শিক্ষা হল আল্লাহর প্রতি একনিষ্ট আনুগত্য করা। দুনিয়াবী সকল ভোগ-বিলাসের আকর্ষণ, সন্তানের স্নেহ, স্ত্রীর ভালোবাসার উর্ধ্বে উঠে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা হল মুসলমানিত্ব। এটা করে গেছেন আমাদের মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আঃ)। জীবনের সর্বাধিক প্রিয় একমাত্র সন্তানকে নিজ হাতে কোরবানি করার কঠিনতম কাজ করতে গিয়ে তিনি আল্লাহর প্রতি অটুট আনুগত্য ও গভীর প্রেম এবং তাওহীদ ও তাকওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এর মাধ্যমে ইব্রাহিম (আঃ) অনাগত মানুষের নিকট আত্মসমর্পণের বাস্তব শিক্ষা রেখে গেছেন। ইব্রাহিম (আঃ) আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কোরবানির পশুর সাথে আমাদের মনের পশুত্বকে কোরবানি দিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদুল আজহা মানুষে মানুষে মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়ে যায়। ঐক্য, একাত্মবাদ, সাম্য-শান্তি, ধৈর্য ও ক্ষমার কথা বলে যায়। আমাদের স্মরণ করে দেয় আমরা সবাই আদম (সাঃ) সন্তান ও এক অভিন্ন পরিবার। ধনী-গরীবের ভেদাভেদ আমাদের মধ্যে থাকতে পারেনা। সুতরাং ঈদুল আজহা উদযাপনের মধ্য দিয়ে শ্রেণি বৈষ্যমের ভেড়াজাল ছিন্ন করে সকল মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের উচ্চমাত্রার সংক্রমণ রোধ করতে গিয়ে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে এদেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই বৎসর যাবৎ চলা এই সংক্রমণের শেষ কোথায় আমরা জানি না। দেশের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ শ্রমজীবী। লকডাউনের কারণে কর্ম হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছে এই সকল মানুষ। বিশেষত যারা দিন মজুর, দিনে এনে দিনে খায় তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কর্মহীন মানুষগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে। এই পরিবার গুলোতে নিত্য দিনের খাদ্য সামগ্রীর চরম সংকট চলছে। এই অসহায়-দুস্থ মানুষের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন কল-কারখানায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছে। সকল কল-কারখানায় শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করুন। আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে সকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করুন। কোনভাবে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিশেষে নেতৃবৃন্দ শ্রমজীবী মানুষসহ দেশবাসীর কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল নিকট দোয়া করেন। মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্য চান। পবিত্র ঈদুল আজহার শিক্ষা আমাদের জীবনে যেন অনাবিল প্রশান্তির বার্তা নিয়ে আসে তার জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে নিবেদন করেন। সর্বোপরি ঈদুল আজহার আনন্দবার্তা প্রতিটি অসহায় দুস্থ মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে সমাজের বিত্তবানদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহবান জানান।