ইন্নাল হামদা লিল্লাহ আসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ।
রাসুল (সা) বলেন: ‘‘তোমরা একে অপরের প্রশংসা করা থেকে দূরে থাকো। কারণ, সম্মুখ প্রশংসা হচ্ছে কাউকে জবাই করার শামিল’’। মুআবিয়া (রা.) এ বলেন, জীবিত কারোর সম্মুখে তার ভূয়সী প্রশংসা করা ঠিক নয় (ইবনু মাজাহ: ৩৮১১) ।
হযরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা সম্মুখ প্রশংসা করো না। কেননা তা হত্যার সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ: ২/৩৭৪৩)
আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবি (সা.) এর সম্মুখে অন্য জনের প্রশংসা করছিলো। তখন নবি (সা.) প্রশংসাকারীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি ধ্বংস হও! তুমি ওর ঘাড় ভেঙে দিয়েছো। তুমি ওর ঘাড় ভেঙে দিয়েছো। এ কথা রাসুল (সা.) কয়েক বার বলেছেন। তবে যদি তোমাদের কেউ অবশ্যই কারোর প্রশংসা করতে চায়, তাহলে সে যেন বলে আমি ধারণা করছি; তবে আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। আমি তাঁর উপর কারোর পবিত্রতা বর্ণনা করতে চাই না। আমি ধারণা করছি, সে এমন এমন। সেও ব্যক্তির ব্যাপারে ততটুকুই বলবে যা সে তার ব্যাপারে ভালোভাবেই জানে।’ (বুখারী: ২৬৬২,৬০৬১, মুসলিম: ৩০০০)
এমনকি রাসুল (সা.) কাউকে কারোর সম্মুখে প্রশংসা করতে দেখলে, তার চেহারায় মাটি ছুঁড়ে মারতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাম্মাম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি উসমান (রা.) এর সম্মুখে তাঁর প্রশংসা করলে, মিক্বদাদ (রা.) তার চেহারায় মাটি ছুঁড়ে মারেন এবং বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা প্রশংসাকারীদেরকে দেখবে, তখন তোমরা তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারবে।’ (মুসলিম: ৩০০২, আবু দাউদ: ৪৮০৪, ইবনু মাজাহ: ৩৮১০)
রাসুল (সা.) কারোর সম্মুখে তার ভ‚য়সী প্রশংসা করতে এ জন্যই নিষেধ করেছেন যেন তার প্রশংসায় কোন রকম অমূলক বাড়াবাড়ি করা না হয় এবং সেও ব্যক্তিগতভাবে নিজ আত্ম-অহমিকা থেকে বেঁচে থাকতে পারে। দুনিয়ায় মুমিনগণ আল্লাহ তায়ালার সাক্ষী। ইবরাহীম (আ.) দুআ করেছিলেন, ‘আমার পর কেয়ামত পর্যন্ত যারা পৃথিবীতে আসবে, তারা আমাকে উৎকৃষ্ট ভাষায় স্মরণ করবে’ (সুরা শুআরা: ৮৪)। নেকির বদলা দুনিয়াতে মহান আল্লাহ প্রশংসা, সুনাম ও সুখ্যাতির মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। ইবরাহীম (আ.)-কে প্রত্যেক জাতিই ভাল নামে স্মরণ করে থাকে। কেউ তার মহানুভবতা ও মর্যাদাকে অস্বীকার করে না।
একজন মুমিন আর একজন মৃত মুমিন ব্যক্তির ভাল গুণের আলোচনা করতে পারে। যারা দুনিয়া থেকে চলে যায়, তাদের কল্যাণের জন্য তাদের ভালো আমলগুলোর উল্লেখ করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় তার সাক্ষী হিসেবে কবুল করেন। এই হাদিস কে সামনে রেখেই এ কথা জানা যায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “সাহাবায়ে কিরাম একবার এক জানাযায় গেলেন। সেখানে তারা মৃতের প্রশংসা করতে লাগলেন। নবি (সা.) তা শুনে বললেন, ‘ওয়াজিব হয়ে গেছে।’ এভাবে তারা আর এক জানাযায় গেলেন সেখানে তারা তার বদনাম করতে লাগলেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনে বললেন, ‘ওয়াজিব হয়ে গেছে।’ এ কথা শুনে উমার (রা.) জানতে চাইলেন, ‘কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ, তার জন্য জান্নাত প্রাপ্তি ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার বদনাম করেছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষী।’ অন্য এক বর্ণনার ভাষা হলো তিনি বলেছেন, ‘মুমিন আল্লাহ তায়ালার সাক্ষী।’” (বুখারী: ১৩৬৭, ২৬৪২, মুসলিম: ৯৪৯) ।
এখান থেকে বুঝা যায় দুনিয়ায় মুমিনগণ আল্লাহ তায়ালার সাক্ষী। একজন মৃত ব্যক্তির ভাল গুণের আলোচনা করতে পারে। যারা দুনিয়া থেকে চলে যায় তাদের কল্যাণের জন্য তাদের ভালো আমলগুলোর উল্লেখ করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় তার স্বাক্ষী হিসেবে কবুল করেন। এই হাদিস কে সামনে রেখেই বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাবেক এমপি এডভোকেট শেখ আনসার আলীর বিষয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব। ওমা তাওফিকী ইল্লা বিল্লাহি আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইহি মুনিব।
এডভোকেট শেখ আনসার আলীর জন্য দুআ ও তার জীবনী থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়ার জন্যই এ লেখার আয়োজন। এডভোকেট শেখ আনসার আলী শ্রমিক আন্দোলনের একটি পরিচিত নাম। শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আইন জগতেও আইন আদালতের সমস্যাগুলো নিয়ে তিনি কাজ করে গেছেন। অসহায় শ্রমজীবী মানুষের অনেক সমস্যা সমাধানে অনেক মামলাও পরিচালনা করেছেন।
আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন, ‘তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরি করে দাও’ (সুরা নিসা: ৭৫)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন এবং দুর্বল অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুদেরকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে বলেছেন। এখানে অত্যাচারী নগরী বলতে মক্কার কাফির-মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। এ আয়াতকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করে আলিম সমাজ বলেন, মুসলিমরা যদি এরূপ অত্যাচার-অবিচারের শিকার হয় এবং কাফিরদের বেষ্টনে অবরুদ্ধ থাকে, তাহলে তাদেরকে কাফিরদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করার জন্য জিহাদ করা মুসলিমদের ওপর ফরজ। (ইবনু কাসীর)
যারা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদে বের হয় না, তাদের তিরস্কার করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হল যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে (জিহাদে) বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ খুবই কম’ (সুরা তাওবাহ: ৩৮)। মুমিনরাই মূলত আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদ করে আর কাফিররা তাগুতের পথে লড়াই করে। শয়তানের বন্ধু কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে আল্লাহ তাআলা বলছেন, জেনে রেখ! শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। সুতরাং যারা বাতিলপন্থী তারা সত্যের মোকাবেলায় সর্বদাই পরাভূত হবে। তাদের চক্রান্ত কোনই কাজে আসবে না। আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় ও মুসলিমদেরকে মুক্ত করার জন্য জিহাদ করা ওয়াজিব।
মুমিনগণ শত্রæদের ভয়ে জিহাদ করা থেকে বিরত থাকবে না বরং ন্যায়ের পথে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এডভোকেট শেখ আনসার আলী এ সব আয়াত দ্বারা যেমন নিজে উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলন জগতে অগ্রসর হয়েছেন, অন্যকেও অগ্রসর করেছেন।
এডভোকেট শেখ আনসার আলী শুধু শ্রমিক নেতাই ছিলেন না; তিনি শ্রমিকদের জন্য বই লিখেছেন। তিনি দুই ধরনের বই লিখেছেন। একটি সাধারণ মুসলমান হিসাবে নামাজ রোজা এবাদত বন্দেগী সম্পর্কে। আরেকটি শ্রমজীবী মানুষের জন্য শ্রমিক আন্দোলন ও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে। এখানে তার চারটি বইয়ের নাম দেওয়া হল। তার লেখা বই, ‘নামাজ কি শিখায়’ বেশ জনপ্রিয়। তার লিখিত অন্যান্য বইগুলো ১. নামাজ কি শিখায় ২. রোজা কি শিখায় ৩. শ্রমিক আন্দোলনে মাওলানা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ ৪. ট্রেড ইউনিয়ন ও ইসলামী আন্দোলন শ্রমজীবী মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার স্ত্রী রোকেয়া আনসারীর লেখা ইসলামী সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা বইটি পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত। এডভোকেট শেখ আনসার আলীর লিখিত ছোট ছোট বই পুস্তক এখনো সংগঠনের কর্মীদের ইসলামী আন্দোলনের পথে উৎসাহিত করে। শেখ আনসার আলী বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য চষে বেড়িয়েছেন। শ্রমিকদের সমস্যা উপলব্ধি করেছেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কখনো আদালতে কখনো জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শুধু দেশেই সফর করেননি পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে সফর করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংঘ, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের সভায় অংশ্রগ্রহণ করেছেন। তিনি ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব লেবার (IICL) এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব লেবার (IICL) এর সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছে। তুরস্কে শ্রমিক আন্দোলনকে ভালোভাবে জানা বুঝার জন্য সফর করেছেন এবং তার দাওয়াতে তুরস্কের বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা হুসাইন তান্ত্রি ভাদ্রি বাংলাদেশে সফর করেছিলেন এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেছিলেন। ফলে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শ্রমিক আন্দোলনে একটি সাড়া জাগিয়েছিল।
এডভোকেট শেখ আনসার আলী বিদেশে সফরের সময়, বিদেশের শ্রমিক নেতাদের সাথে এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় সফরের সময় জেলা শ্রমিক নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করতেন। বিভিন্ন বিভাগীয় শ্রমিক সম্মেলনে জেলা উপদেষ্টাদের দাওয়াত দিতেন এবং তাদের পরামর্শ গুলো শ্রমিক আন্দোলনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতেন। ফলে আন্দোলন গতিশীল হয়ে উঠতো।
একজন অবিশ্বাসীকে যেমন কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই বাস করতে দেওয়া উচিত। তেমনি একজন বিশ্বাসীকেও পরিপূর্ণভাবে তার ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত। এই নীতি-কৌশল একে পার্টি গ্রহণ করেছিল। এর ফলে মুসলমানদের ধর্ম-কর্ম পালনের অধিকারের ব্যাপারটি জোরালো দাবিতে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়ত আস্তিক্য-নাস্তিক্যবাদী, শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি নামে তুর্কি সমাজে যে বিশাল দ্বন্ধ-সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্যকর অবস্থার তৈরি হয়েছিল, খুনোখুনি-হানাহানি আর রক্তপাতের শুরু হয়েছিল ইসলামপন্থিরাই একমাত্র সেটা থামাতে পেরেছিলেন এবং এর ফলে ইসলামপন্থিরা তুর্কি সমাজের ও রাজনীতির প্রধানকর্তা হিসেবে আবির্ভ‚ত হতে পেরেছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইসলামী হুকুমত গঠন কিংবা ক্ষমতায় ইসলামপন্থিদের টিকে থাকতে হলেও সমাজে একটা স্থিতিশীলতা বজায় থাকা জরুরি ছিল। দেশ অস্থিতিশীল থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব হতো না। তুরস্কের এই চিন্তা শ্রমিক মহলেও কাজে লেগেছিল। ব্যাপকভাবে সমাজকল্যাণের কাজ করে তুরস্কের ইসলামপন্থী নেতৃবৃন্দ জনমত কে আন্দোলনের পক্ষে নিতে পেরেছিল। ফলে পরবর্তী পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচনে ঐরকমই ভালো করেছিল যেমন ভাল করেছিল স্থানীয় নির্বাচনে। এটা ইসলামী আন্দোলনের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। এভাবে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সামাজিক কাজ করার জন্য তিনি উদ্বুদ্ধ করেন। অসহায় খেটে খাওয়া শ্রমিক পুরুষ মহিলা সকল শ্রমিককে সমাজ কল্যাণ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। এভাবে সমাজ কল্যাণ কাজের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে গণভিত্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করতেন।
এডভোকেট শেখ আনসার আলী দায়িত্ব পালন করার পরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব আমার উপরে আসে। যতদিন তিনি সুস্থ ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ অফিসে তিনি যোগাযোগ রাখতেন। আমরা তাকে দাওয়াত দিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে তার শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতাম। আনসার ভাই খুবই মিশুক প্রকৃতির লোক ছিলেন। সকলের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলতেন। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে জীবন-যাপন করতেন। নম্র ভদ্র ও হাস্য উজ্জল চেহারার মানুষ ছিলেন। আমরা প্রাণ খুলে মাবুদের নিকট দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁর নেক আমলগুলো কবুল করেন, তাঁকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমিন।
যোগ্যতার সাথে একনিষ্ঠ ভাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সবসময়ই কথা বলতেন এবং কথার শেষে একটা হাসি দিতেন। বিশেষ করে শ্রমিকদের সাথে তার নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ কথাবার্তা তিনি বলতেন। এডভোকেট শেখ আনসার আলী ছাত্র জীবন থেকেই ইসলামী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ইসলামের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন চালু হোক এ বাসনা তার ছোট থেকেই। নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইসলামের বিধানগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করার জন্য তিনি চিন্তা করতেন। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী লিখিত তাফসির তাফহীমুল কুরআন ও অন্যান্য ইসলামী সাহিত্য পড়াশোনা করে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে বুঝতে পারেন। এজন্য লোক তৈরি, জনমত গঠন ও আল্লাহর সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখেন।
আইনজীবী হিসাবে তিনি কুরআনের আইনগুলোকে কিভাবে দেশে চালু করা যায় তার চেষ্টা করতেন। আইনজীবী সংগঠন গড়ে তুলে আইনজীবীদের মাঝে দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যে তিনি আইনজীবীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পরে সংসদে ইসলামী শ্রমনীতির আইন চালু করা, সুদ বন্ধ করা, ঘুষ বন্ধ করা, চুরি বন্ধ করা, যেনা ব্যভিচার বন্ধ করাসহ ইসলামের মৌলিক আইনগুলোকে রাষ্ট্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। রক্তপণ নিয়ে অপরাধীকে ক্ষমা করার কুরআনী নীতি সংসদে চালু করার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বর্ষীয়ান জননেতা এডভোকেট শেখ আনসার আলী বার্ধক্যজনিত ও মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য শুভাকাক্ষী রেখে গেছেন। শেখ আনসার আলীর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উথালী গ্রামে। শেখ আনসার আলী (৭৮) সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে ১৯৯১ সালে জামায়াত থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন।
শেখ আনসার আলীর চাচাতো ভাই শেখ কামরুল ইসলাম জানান, শেখ আনসার আলী দীর্ঘদিন ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। মৃত্যুর ১৫ দিন পূর্বে তিনি বাড়ির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। বয়স্ক ও অসুস্থ ছিলেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কবর জিয়ারত যারা করতে চান তাদের জন্য-এ বিষয়ে ফেডারেশনের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর (আল্লাহ তার শাহাদাত কবুল করুন) পুস্তিকা ”আদাবে জিন্দেগী” থেকে কিছু কথা তুলে ধরলাম। কবরের পাশে গিয়ে অথবা দূরে থেকে দুআ করা মাইয়েতের জন্য সমান সওয়াব। কবরস্থানে গমন করে কবর জিয়ারত করলে মাইয়েতের নেকীর কোন হ্রাস বা বৃদ্ধি হয় না। উপকারটি হয় দুআ কারীর যিনি কবরস্থানে গমন করেন, এটা তাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আব্দুল্লাহ বিন বারিদা থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবরস্থানে গমন কর, কেননা এটা তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করে এত কাঁদলেন যে, তাঁর কান্না দেখে আশপাশের সবাই কাঁদল। তারপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার প্রভুর কাছে অনুমতি চেয়েছি, আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অতঃপর অনুমতি চাই মায়ের কবর জিয়ারত করার জন্য। এবার আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো। অতএব, তোমরা কবর জিয়ারত কর। কেননা এটা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়’ (মুসলিম, আবু দাউদ)। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুল (সা.) আমার কাছে রাত্রিযাপন করেন। সে দিন তিনি শেষ রাতে জান্নাতুল বাকি নামক কবরস্থানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান।’ (মুসলিম)
সম্ভব হলে শেষ রাতে কবর জিয়ারত করা উত্তম। কেননা মন তখন অধিক নরম থাকে। জিয়ারতকারী যখন কবরের কাছে পৌঁছবে, মৃত ব্যক্তির মাথা বরাবর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। জিয়ারতকারী কবরবাসীকে সম্বোধন করে সালাম দেবে এবং তাদের জন্য মহান প্রভুর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করবে। এ ক্ষেত্রে হাত তুলে ও না তুলে উভয় অবস্থায় দোয়া করা যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ‘বাকি কবরস্থানে পৌঁছে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছিলেন।’ (মুসলিম)
মহান আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুণাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় দান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: সাবেক এমপি ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।