বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমিকের রক্ত ঘামে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরলেও শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। স্বাধীনতার পঞ্চাশটি বছর অতিক্রম করলেও দেশে সুষ্ঠু শ্রমনীতি প্রণিত হয়নি। তাই আজও শ্রমজীবী মানুষরা সমাজ ও রাষ্ট্রে অবহেলিত থেকে গেছে। শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে অনেক শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা হলেও তারা কেউ শ্রমিকের সত্যিকারের কল্যাণার্থে কাজ করছে না। এমতাবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তাই শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ইসলামের পতাকাবাহী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি গতকাল (২৫ সেপ্টেম্বর-শনিবার) বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত জেলা ও মহানগরী সমূহের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী শিক্ষাশিবিরের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরিউক্ত কথা বলেন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা এইচ এম আব্দুল হালিম, এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী, লস্কর মুহাম্মদ তসলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান, মুজিবুর রহমান ভূইয়া, মনসুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শ্রমজীবী মানুষের অঙ্গন বহুমুখি সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে তিনটি পক্ষের সম্বনয় প্রয়োজন। এই তিনটি পক্ষ হলো উদ্যোক্তা বা মালিক পক্ষ, যারা শ্রম বিনিয়োগ করেন সেই শ্রমিক পক্ষ এবং যারা উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করেন সেই ভোক্তা পক্ষ। এই তিনটি পক্ষের কেউ যদি কারো বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুলো আর এগিয়ে যাবে না। এই বৃহত্তর ময়দান পিছিয়ে যাবে। ক্রমাগত সংঘাত, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের দিকে যাবে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শুধু শ্রমিকদের সংগঠন না। বরং এটি শ্রমিক মালিক ও ভোক্তাদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া এক অনন্য সংগঠন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন যেমনিভাবে শ্রমিকদের মনে করিয়ে দেয় সততা ও জিম্মাদারির সাথে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে। আল্লাহর দেওয়া মেধা ও শক্তি নিয়ে মালিকের পাশে দাঁড়াতে, আন্তরিকতার সাথে তার কর্তব্য সম্পন্ন করতে । তেমনিভাবে মালিকপক্ষকে স্মরণ করে দেয় শ্রমিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে। কলকারাখানায় শ্রম বান্ধব পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যথাসময়ে শ্রমিকের উপযুক্ত পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিতে। মানুষ হিসেবে বেঁঁচে থাকার জন্য বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ নিত্য প্রয়োজন পূরণ করতে মালিক পক্ষের প্রতি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আহবান জানায়। উপরিউক্ত বিষয়গুলি যদি মালিক পক্ষ পূরণ করতে পারে তাহলে মালিক শ্রমিক এক পরিবারের অংশ হয়ে যাবে। মালিক শ্রমিকের ঐক্যের মাধ্যমে কারখানার উন্নতি সাধিত হবে। পণ্যের মান বৃদ্ধি পাবে। আর পণ্যের মান বৃদ্ধি পেলে ভোক্তাও মালিকের উদ্যোগ ও শ্রমিকের শ্রম উচ্চমূল্যে ক্রয় করবে।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনকে তিন পক্ষের মধ্যে সাধন করতে হবে। কারো সাথে কারো সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। বরঞ্চ পরস্পরকে পরস্পরের সম্পূরক বানাতে হবে। সত্যিকারের কল্যাণ করতে এই পথে হাঁটতে হবে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত শ্রমজীবী মানুষদের পুঁজি করে একদল মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। অনেক সংগঠন শ্রমিকদের রক্ত বিক্রি করে শ্রমজীবী মানুষদের ধোঁকা দিয়েছে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেনশনের নেতাকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেশের মুক্তিকামী মানুষের জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য। তার মত সজ্জন ব্যক্তি সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও অমানবিক আচরণের শিকার। তিনি ডায়বেটিস ও উচ্চরক্তচাপসহ নানামুখি রোগে আক্রান্ত। আমি তাকে আশু মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আ ন ম শামসুল ইসলামসহ তার সঙ্গীদের কারাভোগ এদেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের মুক্তির উছিলা হোক।