বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমজীবী মেহনতী মানুষদের নিরলস পরিশ্রমের ওপর মানব সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে। আজকের আধুনিক সভ্যতার মূল কারিগর হল শ্রমজীবি মানুষেরা। অথচ আজকের সভ্যতা যাদের রক্ত ঘামে উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে সেই শ্রমজীবী মানুষেরা এখনোও তাদের অধিকারটুকু বুঝে পায়নি। অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে শ্রমজীবী মানুষদের দিনের পর দিন আন্দোলন সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। এই অবস্থার ততদিন পর্যন্ত পরিবর্তন হবেনা, যতদিন না বিশে^ ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। কেননা একমাত্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের কল্যাণ নিহিত আছে। আজ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তর কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বনভোজন ও প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মোঃ মহিব্বুল্লাহর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এইচ. এম আতিকুর রহমানের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে (অনলাইনে) উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রধান উপদেষ্টা জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, মহানগরী উপদেষ্টা আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম সহ মহানগরী সকল কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তির দাঁড়প্রান্তে। স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষেরা ছিল অগ্রসেনানী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে আসার পরও এই দেশের শ্রমজীবী মেহনতী মানুষেরা তাদের নায্য অধিকার বুঝে পায়নি। তারা পায়নি বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার। সমাজের প্রতিটি পদে পদে শ্রমজীবী মানুষেরা হয়েছে অবহেলা, শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগেও শ্রমজীবীদের দৈনিক আট ঘন্টার অধিক সময় কাজ করে যেতে হচ্ছে শুধুমাত্র দু-বেলা দু-মুঠো অন্নের সন্ধানে। কর্মস্থলে নেই শ্রমজীবীদের সুচিকিৎসার কার্যকরী ব্যবস্থা। শ্রমজীবীদের জীবনে নেই সুস্থ বিনোদনের কোন ব্যবস্থা। ভবিষৎত প্রজন্মের জন্য নেই ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ। তাই আজ বলা চলে শ্রমজীবী মেহনতী মানুষেরা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত। পশ্চিমা বিশ্বের পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা শ্রমজীবীদের এই দুর্দশার জন্য প্রধানত দায়ী। দুনিয়ার ব্যর্থ মতবাদকে আমাদের মত দেশের গরিব-দুখী মানুষের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। তাই আজকের দিনেও শ্রমজীবি মানুষরা রক্ত ঘামের প্রাপ্য মজুরী আদায় করতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর। অন্যদিকে শ্রেণী বিভাজনের নামে শ্রমজীবী মানুষদের সমাজে কোনাঠাসা করে রাখা হয়েছে। সমাজে তারা প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান থেকে বঞ্চিত।
জনাব শামসুল ইসলাম আরোও বলেন, এই নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের একমাত্র মুক্তির সনদ ইসলামী শ্রমনীতি। ইসলামী শ্রমনীতির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষেরা ফিরে পাবে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান। ইসলাম মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন স্থাপন করেছে। ইসলামী শ্রমনীতি অনুযায়ী মালিক ও শ্রমিকের জন্য অভিন্ন খাবার ও পোষাকের নির্দেশনা রয়েছে। আর এখানেই ইসলামী শ্রমনীতির শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কেবল মাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেওয়া বিধি বিধান ও রাসুল (সাঃ) দেখানো পথে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষদের প্রকৃত মুক্তি ও কল্যাণ। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, শ্রমজীবীরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়, সে কাপড় পরিধান করায়, যা সে নিজে পরিধান করে। তাকে যেন সামর্থের অধিক কাজ না দেওয়া হয়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অন্যত্র বলেছেন, শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে তার মজুরী পরিশোধ করতে। এ থেকে বোঝা যায় ইসলাম একটি উচ্চ মানসিকতা সম্পন্ন শ্রমনীতির কথা বলেছে, যেখানে শ্রমিকের মানসম্মত জীবন-জীবিকা নিশ্চিত হয়। শ্রমিকের অধিকার আদায়েও ইসলাম সচেতন ও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হবো। এদের একজন সে যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পর তার থেকে কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়নি। পৃথিবীতে কেবল মাত্র ইসলামই শ্রমিকের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ ও আদর্শিক পথ দেখিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মদীনা মনোয়ারেতে যে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার অনুসরণ ও অনুকরণের দাবী প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এই দেশে সকল প্রকার জুলুম নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের নিরিখে জোর প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির এই আন্দোলন সারাদেশে শ্রমজীবী মানুষদের আস্থা-বিশ্বাস ও ভালোবাসা ইতিমধ্যে অর্জন করেছে। এই ভালোবাসা ও বিশ্বাস কেবল মাত্র ইসলামী আদর্শ অনুসরণের ফসল।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শ্রমিক বান্ধব কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সদা তৎপর। শ্রমজীবী মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। করোনাকালীন এই দুর্যোগে, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্মহীন, বেকার ও দিনমজুর শ্রমজীবি মানুষদের কাছে সাধ্যের সবটুকু নিয়ে পৌঁছে গেছে। আমাদের এই কর্ম তৎপরতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।