বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ ছিল এদেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ। এই সকল মানুষের একটাই চাওয়া ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধ ও শোষণ মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার। তাদের আশা ছিল বাংলাদেশ হবে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্র সমাজের প্রতিটি মানুষের অধিকার বুঝিয়ে দিতে থাকবে সদা তৎপর। থাকবে না জাতিগত কোন বিভেদ, হানাহানি কিংবা দুর্নীতি লুটরাজ। আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র হবে অগ্রগামী। আজ যখন আমরা প্রায় পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি তখন আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেব মিলিয়ে নিতে হচ্ছে। একটি রাষ্ট্রের জন্য পঞ্চাশ বছর সময় যেমন বেশীও নয় আবার খুব কমও নয়। এই সময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি মানুষের মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসায় পূরণে মোটামুটি সক্ষমতা অর্জন করলেও আজও এক তৃতীয় অংশ মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এই সকল মানুষদের প্রায় সবাই শ্রমজীবি। অথচ স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা সময়ের যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমজীবি মানুষেরা ছিল অগ্রগামী। দুনিয়াবী ব্যর্থ মতবাদ দিয়ে শ্রমজীবি মানুষদের ভুল বুঝিয়ে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেসী মহল তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে কেটে পড়ছে। যার বাস্তব প্রমাণ এই করোনাকালীন সময়ে জাতির সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং এই সকল শ্রমজীবি মানুষদের ভাগ্যের ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না যতক্ষণ না এদেশে ইসলামী শ্রমনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। আজ এই কথা দিবালোকের মত সত্য রূপে ফুটে উঠেছে। আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচী ঘোষণাকালে আ ন ম শামসুল ইসলাম উপরোক্ত কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খাঁন, গোলাম রব্বানী, লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মুজিবুর রহমান ভূইয়া, মনসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
জনাব শামসুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠালঘ্ন থেকে এই দেশের শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য অনবরত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এই দেশে ইসলামী শ্রমনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন চায়। ইসলামী আদর্শ দিয়ে এই দেশ থেকে সকল প্রকার অন্যায়, জুলুম, শোষণ নিপীড়ন দূর করে একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়। দেশের বিভিন্ন পাটকল, চিনিকলসহ সরকারি মিল কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের চাকুরীচূত করার প্রতিবাদে ফেডারেশন রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। হামলা-মামলার শিকার শ্রমিকদের আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা করে যাচ্ছে ফেডারেশন। তাই আজ বাংলাদেশে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শ্রমজীবিসহ গণমানুষের কাছে এক আস্থাশীল সংগঠনের নাম। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন তার আদর্শিক লক্ষ্য ও শ্রমিক বান্ধব কর্মসূচী দিয়ে এদেশের আপামার জনতার মন জয় করেছে।
জনাব ইসলাম আরও বলেন, একটি দেশের এক তৃতীয় অংশ মানুষ যখন দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে তখন আপনি এই শ্রেণীকে বাদ দিয়ে কোন ভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন না। তাই বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শ্রমজীবিদের মানুষদের দুঃখ দুর্দশা মুছে দিতে অবিরত কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমজীবি মানুষদের কর্মসক্ষম করে তুলতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী ইতিমধ্যে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন গ্রহণ করেছে। এইগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষন ও কর্মসংস্থান, আত্মনির্ভর গড়ে তুলতে প্রশিক্ষনের পাশাপাশি পুঁজি সরবরাহ। শ্রমিকদের সন্তান-সন্তুতির শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থাসহ নানামুখী পদক্ষেপ। শ্রমিকদের যেকোন দূর্যোগে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সবর্দা অগ্রগামী ছিল। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত, পঙ্গুত্ববরণকারীদের চিকিৎসাসহ পরবর্তীতে তার পরিবারের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করার কাজেও ফেডারেশন রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পূবশর্ত হচ্ছে নীতি নৈতিকতা সমৃদ্ধ জাতি গঠন করা। বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যেতে বারংবার হোঁচট খাচ্ছে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ অসৎ শ্রেণীর মানুষদের কর্মের কারণে। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চায়। তাই এই ফেডারেশন তার কর্মীদের সকল প্রকার অন্যায় অনিয়ম লুটরাজ থেকে দূরে রাখতে ইসলামী আদর্শকে অনুকরণ করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। আদর্শিক নেতৃত্ব তৈরী করতে ফেডারেশন বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একই সাথে শ্রমিকদের নায্য অধিকার আদায়ে রাজপথে জোরালো ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ওপর আসা যেকোন আঘাত মোকাবিলায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সদা তৎপর। আজকের এই দিনে আমরা শ্রমজীবি মানুষদের অধিকার আদায়ে অতীতের ন্যায় দৃঢ় ভূমিকা আগামী দিনে অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
অতঃপর তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেন-
১. মহানগরী, জেলা, উপজেলা, থানা ও ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে র্যালী ও আলোচনা সভা ।
২. বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাথে সাক্ষাত এবং উপহার প্রদান।
৩. অস্বচ্ছল ও কর্ম-অক্ষম শ্রমিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
৪. শ্রমিক পরিবারের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ।
৫. বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান।
৬. অনাথ , পথশিশু ও সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে খাবার বিতরণ।
৭. ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচি পালন।
৮. খেলা-ধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
৯. শ্রমিক সমাবেশ, সামষ্টিক ভোজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
১০. মহানগরী ,জেলা, উপজেলা, থানা ও ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো।