শ্রমিক সংগঠন কি?
১. শ্রমিকের দাবী-দাওয়া ও অধিকার নিয়ে যে সংগঠন কাজ করে তাকেই শ্রমিক সংগঠন বলা হয়।
২. শ্রমিক সংগঠন বলতে মূলতঃ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনকে বোঝায়। শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শ্রমিক সংগঠনের গুরুত্ব:
১. জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার
ঘোষণাপত্র ২৩-২৫ ধারা, বাংলাদেশের সংবিধান ১৪-১৫ ধারা, আইএলও কনভেনশন ৮৭, ৯৮ ও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৭৫ ২০৮ ধারা শ্রমিকদের সংগঠন করা/ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
২. শ্রমজীবি মানুষ তুলনামূলকভাবে অসহায় হলেও ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে বড় শক্তিতে পরিণত হয়।
৩. শ্রমজীবি, দুর্বল, অসহায় নর-নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই সংগ্রাম করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে সূরা নিসা-৭৫ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, “তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার জন্য নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোনো বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও”। কাজেই শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জুলুম থেকে রক্ষা করার জন্য শ্রমিকদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করার বিকল্প নেই।
৪. শ্রমিকদের সংগঠিত করে বিগত শতাব্দিতে চীন, রাশিয়াসহ সারা পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশে কমিউনিষ্ট বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। কমিউনিষ্ট বিপ্লবের মূল শক্তি ছিলো শ্রমজীবী মানুষ। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় অত্যাচারী জার সম্রাটের বিরুদ্ধে লেলিনের নেতৃত্বে ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, শ্রমিকরাজ কায়েম করো’ এ শ্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে শ্রমিকরা সর্বহারার রাজ তথা শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠা করে। আবার ঐ রাশিয়ায় ১৯৯০ সালে সমাজতন্ত্রের পতনের আন্দোলনে লেলিনবাদে শ্রমিকরা ট্যাঙ্কের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৯ সালে চীনের কৃষি শ্রমিকরা ‘লাঙ্গল যার জমিন তার’ শ্লোগানে উজ্জিবীত হয়ে কমরেড মাওসেতুং এর নেতৃত্বে চিয়াং কাইশেককে উৎখাত করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করে। ১৭৭৬ সালে ‘সাম্য মৈত্রী ও স্বাধীনতার’ ফরাসী বিপ্লবে বাস্তিল দুর্গ পতনে শ্রমিকরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং শ্রমিকদেরকে সংগঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে যেকোনো আদর্শকে সহজে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
৫. শ্রমিক সংগঠনগুলোর মূল শক্তি হলো ট্রেড ইউনিয়ন। ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া শ্রমিক সংগঠনগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে এবং সরকার ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও এর কোন গুরুত্ব থাকে না।
৬. বাংলাদেশের পরিবহন ও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে যতবারই দাবী আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে তারা সফলতা পেয়েছে।
সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার বিকল্প নাই।
আমাদের শ্রমিক সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য:
১. ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে শ্রমজীবি মানুষের সত্যিকার মুক্তি সাধন করা।
২. ইসলামে শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শ্রমিকদেরকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম জোরদার করা।
৩. কল্যাণমুলক ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য শ্রমিক ময়দানকে প্রস্তুত করা। এই লক্ষ্যে শ্রমিক জনগোষ্ঠীকে ইসলামী জীবন বিধান পুরোপুরি পালনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো।
৪. শ্রমিক ময়দানে ইসলামী আদর্শের প্রভাব সৃষ্টি করা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ শেখার পাঠশালা হিসেবে পরিণত করা।
৫. শ্রম সেক্টরে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
৬. মজলুম মানুষের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা এবং সকল প্রকার জুলুমের অবসান ঘটিয়ে সুবিচার নিশ্চিত করা।
৭. শ্রেণি সংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণি সমঝোতা এবং বৈধ ও ন্যায় সংগত অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।
৮. প্রচলিত ট্রেড ইউনিয়নের ধারা পরিবর্তন করে নতুন কল্যাণমূলক ধারার সূচনা করা।
শ্রমিক সংগঠন পরিচালনায় দায়িত্বশীলদের ভূমিকা পরিকল্পনা প্রণয়নে ভূমিকা :
সময়োপযোগী ও ময়দানের বাস্তব অবস্থার আলোকে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নে দায়িত্বশীলদের নিম্নোক্ত বিষয়াবলীকে সামনে রাখতে হবে।
– সংশ্লিষ্ট শাখায় মোট শ্রমিক সংখ্যা কত?
– পেশাভিত্তিক সম্ভাব্য শ্রমিক সংখ্যা কত?
– প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক সংখ্যা কত?
– মোট নারী শ্রমিক কত?
– ফ্যাক্টরী/মিল কল-কারখানার সংখ্যা কতটি?
– কর্মহীন শ্রমিক কতজন?
– পেশাভিত্তিক জনশক্তির শ্রেণীবিন্যাস করা।
– অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের তৎপরতা জানা।
– অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা/আর্থিক সক্ষমতার দিক বিবেচনায় রাখা ।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা :
১. পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ। (ত্রৈ-মাসিক/ষান্মাসিক/বার্ষিক)
২. গৃহীত পরিকল্পনা সকল জনশক্তির মাঝে বন্টন করে দেওয়া। এক্ষেত্রে জনশক্তির মান, অবস্থান ও ঝোঁক প্রবণতার প্রতি লক্ষ্য রাখা।
৩.দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বন্টনকৃত কাজের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যালোচনা করা।
৪.নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং করা।
৫.অধ:স্তন পর্যায়ের সকল সংগঠন (উপজেলা/থানা/পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড/ইউনিট/ট্রেড ইউনিয়ন) থেকে নিয়মিত রিপোর্ট সংগ্রহ নিশ্চিত করা এবং পরিকল্পনার আলোকে কাজের অগ্রগতির পর্যালোচনা ও জবাবদীহিতা নেওয়া।
৬.দায়িত্বশীলসহ সর্বস্তরের জনশক্তিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত থাকা।
দাওয়াত সম্প্রসারনে ভূমিকা :
১.জনশক্তিকে দাওয়াতী কাজের অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা।
২.জনশক্তির ব্যক্তিগত ও টার্গেটভিত্তিক দাওয়াতী কাজ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে প্রত্যেক জনশক্তির ব্যক্তিগতভাবে বছরে ৩৬জন সাধারণ সদস্য বৃদ্ধি, ২৪টি বই বিলি ও ১২টি বই বিক্রির বিষয় তত্ত্বাবধান করা।
৩. গ্রুপ ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানা, শিল্পাঞ্চল, গ্যারেজ, ষ্ট্যান্ড ও শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় দাওয়াতী তৎপরতা চালানো এবং দাওয়াতী ইউনিট গঠন করা।
৪.সকল পেশা/ট্রেডে সংগঠনের কাজকে জালের মতো ছড়িয়ে দেয়া এবং প্রতিটি পেশায় পেশাভিত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে দাওয়াতী তৎপরতা পরিচালনা করা।
৫.পরিকল্পিতভাবে সেবামুলক কার্যক্রম তথা স্বাস্থ্যসেবা, আত্মকর্মসংস্থান, শিক্ষা সহায়তা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের সেবা ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নমুলক কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষকে দাওয়াতী বলয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৬.দাওয়াত সম্প্রসারনে ব্যাপক শ্রমিকবান্ধব ও কল্যাণমুলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৭.প্রভাবশালী ও নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন শ্রমিকদের মাঝে টার্গেট ভিত্তিক কাজ করা।
৮.নারী শ্রমিকদের দাওয়াতের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে শিল্প সেক্টরসহ নারী শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া।
৯.ইসলামী শ্রমনীতির উপর সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা এবং ইসলামী শ্রমনীতি প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা।
১০.সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ই-মেইল, ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে দাওয়াতী তৎপরতা পরিচালনা করা।
১১.শ্রমজীবি মানুষের সাথে সম্পর্কিত শর্টফ্লিম, নাটক, গান, দাওয়াতী সিডি-ভিসিডি প্রকাশ ও অনলাইনে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
১২.শ্রমিক আন্দোলন সংশ্লিষ্ট বই, পত্রিকা ও দাওয়াতী উপকরণ বিশেষ করে নববর্ষের ক্যালেন্ডার, ডায়েরী ও স্টীকার ব্যাপক হারে বিতরণের পদক্ষেপ নেওয়া।
১৩.আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালনের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে দাওয়াতী প্রভাব বলয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।
১৪.বিশেষ দাওয়াতী সপ্তাহ/দশক/ পক্ষ পালন করা।
১৫.সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও শিক্ষা সফরসহ বিনোদনমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা।
১৬.কুরআন শিক্ষার আসর, নামাজ শিক্ষার ক্লাসের মাধ্যমে দাওয়াত প্রদান করা।
১৭.অন্যান্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচিত হওয়া, ফেডারেশনের দাওয়াতী সামগ্রী পৌঁছানো ও সম্পর্ক তৈরীর চেষ্টা করা।
সংগঠন সম্প্রসারনে ভূমিকা
১.সকল পেশা/ ট্রেডে সংগঠনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২.প্রত্যেক পেশাভিত্তিক কমিটি গঠন/দাওয়াতী ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা।
৩.প্রশাসনিক সর্বস্তরে কমপক্ষে ইউনিট গঠনের মাধ্যমে সংগঠনকে সম্প্রসারন করা।
৪.যে সকল ওয়ার্ড/ইউনিয়নে সংগঠন নেই সেসকল স্থানে সংগঠন কায়েম করা।
৫.সাধারণ শ্রমিকদের নিকট ফেডারেশনকে ব্যাপক পরিচিত করার উদ্যোগ নেওয়া।
৬.নতুন নতুন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
৭.সকল পেশার শ্রমজীবী মানুষের নিকট দাওয়াত পৌছানোর লক্ষ্যে পরিকল্পিত তৎপরতা চালানো।
৮.সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া।
সংগঠন মজবুতি করণে ভূমিকা
১.সংগঠনের বর্তমান অবস্থাকে সামনে রেখে মজবুতি অর্জনের স্বল্পমেয়াদী কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী টার্গেট নির্ধারণ করা।
২.ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সক্রিয়, গতিশীল ও শ্রমিক বান্ধব করা।
৩.গুরুত্বপূর্ণ পেশা সমূহের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা এবং পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৪.প্রশাসনিক সকল স্তরে শক্তিশালী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা।
শতভাগ থানা/উপজেলায়/পৌরসভায় মজবুত সংগঠন কায়েম করার উদ্যোগ নেওয়া।
৫.ইউনিটগুলোকে সক্রিয় রাখা ও নিয়মিত মৌলিক প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা।
৬.সকল জনশক্তিকে সক্রিয় রাখা এবং নিয়মিত যোগাযোগের আওতায় রাখা ।
৭.অধঃস্তন সংগঠনে পরিকল্পিত সফর বৃদ্ধি করা।
সেক্টর/পেশা ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনায় ভূমিকা:
১. প্রত্যেক পেশায় কার্যক্রম মজবুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২. প্রত্যেক মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে প্রত্যেক পেশাভিত্তিক সক্রিয় কমিটি গঠন করা। এক্ষেত্রে ‘যত পেশা ততো কমিটি’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং তৃনমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
৩. প্রত্যেক জনশক্তিকে পর্যায়ক্রমে সেক্টর/পেশা ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত/বন্টন করা।
৪. জনশক্তি যে পেশার সাথে সম্পৃক্ত তাকে সে পেশায় কাজে লাগানো। প্রত্যেক জনশক্তিকে নির্দিষ্ট পেশা ও কাজের টার্গেট ঠিক করে দেওয়া।
৫. সেক্টর/পেশা ভিত্তিক ইউনিট বৃদ্ধি ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখা।
৬. সেক্টর ভিত্তিক শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা।
৭. স্ব-স্ব সেক্টরের শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া।
৮. মাসিক ও বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে সেক্টরের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৯. সেক্টর দায়িত্বশীলদের নিয়ে মাসিক/দ্বি-মাসিক রিপোটিং বৈঠকের আয়োজন করা।
ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে/সম্প্রসারনে ভূমিকা:
১. পরিকল্পিতভাবে প্রত্যেক উপজেলায়/থানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
২. প্রতিটি পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া। এক্ষেত্রে ‘যত পেশা ততো ইউনিয়ন’ এই শ্লোগানকে ধারন করে ট্রেড ইউনিয়ন সম্প্রসারনে ভূমিকা রাখা।
৩. তৃণমূল পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম বিস্তৃত করন। অর্থাৎ ট্রেড ভিত্তিক শিল্প কল-কারখানায়, গ্যারেজ, স্ট্যান্ড, প্রতিষ্ঠান, সংস্থার মাঝে ট্রেড ইউনিয়ন কাজের বিস্তৃতি ঘটানো।
ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের মজবুতি অর্জনে ভূমিকা:
১. শাখার আওতাধীন সকল ট্রেড ইউনিয়নকে সাংগঠনিক ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা মানে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২. প্রকাশ্যে ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের কার্যক্রম পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে ইউনিয়নের সদস্যদের আইডি কার্ড প্রদান, নিয়মিত মাসিক চাঁদা আদায় এবং নেতৃবৃন্দের নিয়মিত অফিসে সময়দান ও শ্রমিক সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা।
৩. শ্রম আইনের নির্দেশনা মোতাবেক ট্রেড ইউনিয়নগুলোর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৪. ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক ও নৈতিক মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো।
৫. শ্রমিক স্বার্থমূলক ইস্যুতে শ্রমিকদেরকে সম্পৃক্ত করে ইউনিয়নের ব্যানারে দাবী আদায়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করা। এক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ, স্বারকলিপি ও মানববন্ধনের আয়োজন করা।
৬. ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের নিয়মিত দাওয়াতী তৎপরতা চালানো এবং ইউনিয়নের নতুন সদস্য বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করা।
৭. প্রত্যেক ইউনিয়নের Chain of Leadership ঠিক রাখা। এক্ষেত্রে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনের সদস্য মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া।
৮. ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের শ্রম আইন সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
৯. শ্রমিক সেবামুলক কাজের মাধ্যমে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে ইউনিয়নের প্রভাব বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।
১০. প্রভাবশালী ও নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন শ্রমিকদেরকে ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা।
১১. শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা।
১২. ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে শ্রমিক বান্ধব ও কল্যাণমুলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।
১৩. মাসিক ও বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১৪. ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বছরে কমপক্ষে এক বার ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন”এর আয়োজন করা।
১৫. প্রতিবছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের রিটার্ণ দাখিল করা
১৬. প্রতিমাসে কিংবা দু’মাস অন্তর ট্রেড ইউনিয়ন দায়িত্বশীলদের নিয়ে রিপোর্টিং বৈঠকের আয়োজন করা এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা।
কাঙ্খিত শ্রমিক নেতৃত্ব তৈরীতে ভূমিকা:
১. সাহসী ও নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন শ্রমিক জনশক্তি বাছাই করা।
২. বাছাইকৃত জনশক্তিকে নিয়মিত সাহচর্য প্রদান করা।
৩. নিয়মিত পাঠচক্র পরিচালনা করা।
৪. শ্রম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ময়দান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৫. ত্রুটি দূরীকরণ, সংশোধন ও পরিশুদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।
৬. মেজাজ, আচার-আচরণ, আমল-আখলাক, লেন-দেন ও নৈতিক মান সংক্রান্ত খোঁজ-খবর রাখা।
৭. আদর্শিক জ্ঞানের ঘাটতি দূরীকরণের উদ্যোগ নেওয়া।
৮. সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলা পালনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা।
৯. আনুগত্য পরায়ণ এবং সংগঠনের মেজাজ অনুযায়ী গড়ে তোলা।
১০. নিয়মিত দাওয়াতী কাজে অভ্যস্ত করানো।
১১. আন্দোলনের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা তৈরী করা।
১২. কষ্ট সহিষ্ণু ও পরিশ্রম প্রিয় করে গড়ে তোলা।
১৩. শ্রমিক ময়দানে কাজে দক্ষ করে গড়ে তোলার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে দর কষাকষি করার যোগ্যতা এবং মালিক ও প্রশাসনের সাথে কথা বলার যোগ্যতা তৈরী করা।
১৪. ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীদের শ্রমিক ময়দানে নেতৃত্বের জন্য বাছাই করা।
১৫. গণমুখী চরিত্র সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরী করা।
১৬. আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া এবং নাম ধরে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
জনশক্তির সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা:
১. “শ্রমিক সংগঠনের কর্মী মানে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কর্মী” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সর্বস্তরে শ্রমিক জনশক্তির ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের কার্যক্রম সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
২. শ্রম আইন, শ্রম বিষয়ক জ্ঞান ও ইসলামী শ্রমনীতি বিষয়ক সম্যক ধারনা প্রদান করা।
৩. পেশাভিত্তিক জনশক্তিকে বাছাই করে সংশ্লিষ্ট পেশায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
৪. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৫. প্রশিক্ষন প্রোগ্রামগুলোকে শ্রমিক বান্ধব ও আকর্ষণীয় করা।
আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা:
১. আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত ব্যয় নির্বাহকল্পে অর্থ বিভাগের আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া।
২. সকল জনশক্তির মাসিক নেসাব নিয়মিত আদায়ের ব্যবস্থা করা।
৩. সকল নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নের উর্ধ্বতন মাসিক চাঁদা নির্ধারণ ও নিয়মিত আদায়ের ব্যবস্থা করা।
৪. উপদেষ্টা সংগঠন থেকে মাসিক নিয়মিত সহযোগিতা পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো।
৫. শুভাকাঙ্খী বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।
সংগঠনের ইমেজ বৃদ্ধিতে ভূমিকা:
১. শ্রমিকদের বিপদে আপদে পাশে থাকা। সাধ্যমত সহযোগিতা করা।
২. ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে ব্যাপক সেবামুলক কার্যক্রম চালু করা।
৩. শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবী আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া।
৪. জনশক্তির মধ্যে মানুষের কল্যাণে সময়, শ্রম ও আর্থিক কোরবানী পেশ করার মানসিকতা তৈরী করা।
৫. শ্রমঘন এলাকায় এবং ফ্যাক্টরীতে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা সেবা প্রদান, ঔষধ বিতরণ ও ব্লাড গ্রুপিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৬. চাকুরীচ্যুত শ্রমিকদের আইনী সহযোগিতা প্রদান এবং কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া।
৭. শ্রমিক পরিবারে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে সাধ্যনুযায়ী সহযোগিতা প্রদান করা।
৮. বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং কর্ম-অক্ষম শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রদান করা।
৯. শিশু শ্রম বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া।
মহিলা শ্রমিকদের মাঝে কাজ সৃষ্টিতে ভূমিকা:
১. শ্রমজীবী মহিলাদের মাঝে সংগঠনের কাজকে বিস্তৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২. অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গার্মেন্টস, দর্জি, গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তাঁত শিল্প ও চাতাল শ্রমিকদের মাঝে কাজ সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
জনশক্তির মানোন্নয়ন ও মান সংরক্ষনে ভূমিকা:
১. নিয়মিত সদস্য, কর্মী ও সাধারণ সদস্য বৃদ্ধি করা।
২. জনশক্তির ব্যক্তিগত উদ্যোগে সদস্য ও কর্মী বৃদ্ধির টার্গেট বাস্তবায়নে তদারকি বৃদ্ধি করা।
৩. অগ্রসর জনশক্তিকে বাছাই করে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষন প্রদান করা।
৪. ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সাহচার্য্য প্রদান করা।
৫. জ্ঞানের ঘাটতি দুর করা।
৬. নৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিশুদ্ধতা অর্জনে ভূমিকা রাখা।
৭. আমল আখলাক ও মুয়ামেলাতের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত মান অর্জনে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা।
৮. মানসম্মত ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষন প্রদান করা।
৯. পেশাভিত্তিক নেতৃত্ব তৈরীতে উপযোগী জনশক্তিকে বিশেষ টার্গেট নিয়ে মানোন্নয়ন করা।
১০. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যক্তিগত ভাবে নফল ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলা।
গতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা:
১. জনশক্তিদের মধ্যে Team Speed সৃষ্টি করা।
২. পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালানো।
৩. সর্বপর্যায়ে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করা।
৪. পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা।
৫. পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করা এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
৬. জনশক্তির মাঝে ইনসাফ কায়েম করা।
৭. সর্বপর্যায়ে চিন্তার ঐক্য গড়ে তোলা।
৮. অপরের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া।
৯. মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা।
১০. দায়িত্বশীলদের যোগ্যতার সকল কিছু উজাড় করে দিয়ে ভূমিকা রাখা।
সর্বোপরি সংগঠন পরিচালনায় মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট সর্বদা সাহায্য প্রার্থনা করা একজন দায়িত্বশীলের প্রধানতম কর্তব্য। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকল প্রকার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাকে দূরীভূত করে শ্রমিক ময়দানে আমাদের উপর অর্পিত দ্বীনি আন্দোলনের মহান জিম্মাদারী সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দিন। ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফল করে শ্রমজীবী মানুষের সত্যিকার মুক্তি অর্জনের পথকে সুগম করে দিন। আমিন
লেখক-: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন