আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আলহামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামিন, ওয়াসসালাতু, ওয়াসসালামু আলা রাসুলিহিল কারিম, ওয়ালা আলিহি, ওয়া আসহাবিহি, ওয়া আহলে বাঈতিতি আজমাঈন।
শ্রমিক অঙ্গনের মজলুম মানুষের মুক্তিকামী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। ফেডারেশনের ৮৯ টি শাখার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ভাইদের নিয়ে আয়োজিত আজকের এই মোবারক আয়োজনের সম্মানিত সভাপতি-সঞ্চালক, কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল-মেহমানবৃন্দ ও ডেলিগেট বন্ধুগণ আল্লাহ তাবায়ারকু তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি পবিত্র জুমাআ বারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মেহনতি ও মজলুম মানুষের মুক্তির ঠিকানা এই সংগঠনের আজকের এই আয়োজনে আমাদের সকলকে শামিল হওয়ার তাওফিক দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামিন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনকে আমি আন্তরিক শুকরিয়া জানাই তারাও আমাকে আপনাদের সাথে শরিক হওয়ার জন্য দাওয়াত করেছিলেন। যার ফলে আমিও সুযোগ পেলাম আপনাদের সাথে শামিল হওয়ার। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
সম্মানিত ভাইয়েরা
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কার্যকরভাবে চিন্তা করতে গেলে ৬৮-৭০ ভাগ মানুষই শ্রমের সাথে সম্পর্কিত এবং তাদের সকলকেই শ্রমজীবী বলা হয়। বিশেষ পেশায় বিশেষ কাজের শ্রমজীবী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ৩০ ভাগ মানুষ যারা শ্রমের সাথে সম্পর্কিত নয়। তারা হয়ত অসুস্থ না হয় বয়োবৃদ্ধ অথবা তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা তাদের একটা অংশ হয়তো বয়স হলেও লেখাপড়া সাথে সম্পর্কিত। সরাসরি কোন সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের সাথে কোন রকম সম্পৃক্ত না। আমিসহ বাকি সকল মানুষ পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে শ্রমের সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে থেকে বিশেষভাবে যারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশ এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখেন এবং গতিশীল করেন তাদেরকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বিবেচনা করা হয় অথবা এরও নিচের দিকে বিবেচনা করা হয়। তাদের সাথে আচার-ব্যবহার চতুর্থ শ্রেণির মানুষ হিসেবেই করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আছেন বা মালিকপক্ষ আছেন, তার অনেক সময় ইনসাফ করেন না। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা মালিকদের নিকট থেকে অবহেলা বঞ্চনা এবং দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে থাকেন। এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
মানুষের দুর্বল দিকগুলোকে কেন্দ্র করে এর সমাধানের নামে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠনই বামপন্থীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তারা লাল পতাকা হাতে নিয়ে চমৎকার স্লোগান দেয়। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় যে শ্রমিকদের ভাগ্যকে কেন্দ্র করে ঐসমস্ত লাল পতাকাওয়ালা নেতারা নিজেদের ভাগ্যকে গড়ে নেয়। শ্রমিক যে তিমিরে ছিলো সে তিমিরে থেকে যায়। তাদের আর কপালে কোনো পরিবর্তন হয় না। সত্যিকার অর্থে তাদের জীবনে বড়ো কোন পরিবর্তন আসে না। তাদের হক এবং অধিকারের ব্যাপারে নতুন কোন অধ্যায় জন্ম নেয় না। বরং এ ধরনের আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে যায়। কেউ ছাঁটাই হয় কেউ মামলার ফাঁদে পড়ে এখান থেকে বাহির হয়ে যায়। আরেকটা নতুন অভিশাপ তার জীবনে এসে দেখা দেয়। যারা নেতৃত্বের জায়গায় থাকে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। তারা এদিক সেদিক দর-কষাকষি করে জীবন চালিয়ে নেয়।
এই যে লাল পতাকাওয়ালারা আজীবন ধরে শ্রেণি সংগ্রামের কথা বলে আসছে। এরা সমাজকে বিভিন্ন শ্রেণিতে নিজেরাই বিভক্ত দেখতে চায়। এক শ্রেণির বিরুদ্ধে আরেক শ্রেণিকে তারা ক্ষেপিয়ে তুলতে চায়। দুইটা শ্রেণি যখন পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যায় সেখানে সমন্বয় সহযোগিতা আর থাকে না। সেখানে কোন ধরনের ভ্রাতৃত্ব এবং মানবতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সেখানে এক শ্রেণি কিভাবে আরেক শ্রেণিকে দমন করবে এবং বৈধ-অবৈধ যেকোনোভাবেই হোক নিজের স্বার্থকে হাসিল করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। এ সংগ্রামটাই চিরন্তন চলে আসছে। ফলে কর্মের জায়গায় কর্ম উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয় না। এ কারণেই শুধু শ্রমিকরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং কিছু ক্ষেত্রে মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষিপ্ত শ্রমিকদেরকে এমনভাবে উত্তেজিত করা হয় যে মাঝেমধ্যে সে তার রিজিকের ঠিকানায় আঘাত করে বসে। আগুন দিয়ে ও ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে বসে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেওয়া বিধি-বিধান ও রসুল (সা.) শ্রমিকদের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করার হুকুম দিয়েছেন তা যদি মালিকরা পরিপালন করতো তাহলে এখানে শ্রেণি সংগ্রাম এবং শ্রেণি সংঘাত সৃষ্টি হতো না। একটি জটিল ফরমুলার আবর্তে যুগের পর যুগ মানুষ পড়ে আছে। মালিকপক্ষ ছলে বলে কৌশলে লাভবান হতে চায়। শ্রমিকের রক্তে গড়া ঘামের বিনিময় হলেও তার সম্পত্তি বাড়াতে চায়। এমন কিছু মালিক আছেন যারা বৈধ-অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। অথচ এসব সম্পদ নিজে ভোগ করে যেতে পারেন না। তারা অনেকে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে এবং এর দ্বারা ঐ দেশের সরকার এবং জনগণ অনেক উপকৃত হয়।
অবৈধ সম্পদ মালিকদের কোন উপকারে আসে না। বরং এসব সম্পদের জন্য দুনিয়াতে তাদের লাঞ্চিত হতে হয়। চরম অশান্তির মধ্যে তাদের সময় কাটে। তাদের হায়াতটা এরকমভাবে চলে যায়। তবে হ্যাঁ কেউ কেউ নিজের অপরাধ উপলব্ধি করে সে ফিরে আসে আল্লাহর দিকে। তওবা করে দ্বীনের পথে যদি ফিরে আসে আল্লাহ তাকে হয়তোবা পথ দেখাবেন। তাকে ক্ষমা করে দিবেন। একটা পবিত্র জীবন তাকে দান করবেন। দ্বীনের পথে যে ব্যক্তি চলে আসবে সে আর মানুষের ওপর আর জুলুম করবে না। কিন্তু খুব কম ব্যক্তি দ্বীনের পথে ফিরে আসে।
হাড়াভাঙা পরিশ্রম করা সত্ত্বেও শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। তারা তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে অবৈধ পথে পা বাড়ায়। অবৈধ পথে অনেক শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। অনেকে মানসিক যন্ত্রনায় আত্মহত্যা করে বসে। অনেকের পরিবার ভেঙে যায়। সন্তানরা পরিবার ছেড়ে চলে যায়। স্বামী স্ত্রীকে ছেড়ে আবার স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে চলে যায়। পারিবারিক অশান্তিতে তারা অপরাধ জগতে হারিয়ে যায়। তখন কিছু ব্যক্তি এই সমস্ত মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের বাসস্থানে অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলে। মদ, জুয়া ও নারীর আসর বসিয়ে নানা অপকর্ম করে গরীব মানুষদের আরও নিঃস্ব করে তুলে।
শ্রমিকের সন্তানরা পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। পরিবারের পক্ষ পড়াশোনার ব্যয়ভার মেটানো সম্ভব হয় না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। গডফাদারা শুরুতে বিনামূল্যে মাদক দিয়ে তাদের মাদকাসক্ত করে তুলে। পরবর্তীতে এর ফায়দা তারা লুটে নেয়। এসব সন্তানদের দিয়ে তারা মাদকের কারবার করে থাকে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে তারা নিজের অজান্তে জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ অপরাধে। এই জগত থেকে তার পক্ষে আর বেড়ানো সম্ভব হয় না। জীবনের এরকটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে তাদের জীবনে হাহাকার দেখা দেয়। এই অশান্তির সুযোগে গডফাদারা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। চুরি-ছিনতাই হতে শুরু করে মানুষ খুন তাদের নেশা হয়ে যায়। অপরাধের কালোছায়া তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সমাজের চোখে এরা হয়ে যায় ইতর ও বন্যপ্রাণী। মানুষ তাদেরকে আর মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
শ্রমিকের সন্তানদের ঘুম ভাঙার পর প্রথম নজর যায় মালিকের ১০ তলার বাড়ির দিকে। সুউচ্চ দালান তার মধ্যে প্রতিহিংসা জন্ম দেয়। সেভাবে তার পিতা-মাতার পরিশ্রমের ফসল হিসেবে মালিক এই বাড়ি করেছে। অথচ তারা সহায় সম্বলহীন। তার মধ্যে প্রতিহিংসা থেকে প্রতিশোধের স্পৃহা জাগ্রত হয়। সে মালিককে একটি শিক্ষা দিতে চায়। এই শিক্ষা দিতে গিয়ে সে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে যায়। একটি পর্যায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে আজীবন জেলে কাটাতে হয়। তার কাছে মামলা পরিচালনা করার মতো অর্থ থাকে না। ফলে তার মামলা দেখার মতো আর কেউ থাকে না। এই হতাশা নিয়ে তাকে জেলের অন্ধপ্রকোষ্ঠে কাটিয়ে দিতে সারাজীবন।
২০১৩ সালে আমি জেলে এক ব্যক্তিকে দেখেছি। যিনি বয়স বিবেচনায় মুক্তি পাওয়া সত্তে¡ও জেল থেকে বের হননি। তাকে বলা হলো সাজার মেয়াদ শেষ, আপনি মুক্ত। তিনি বললেন, আমি কোথায় যাবো। আমার বয়স ৮২। আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমার সন্তানরা কোথায় আছে আমি জানি না। যতদিন তারা পেরেছে সম্পত্তি বিক্রি করে মামলা চালিয়েছে। এখন কিছুই নেই। আমি জেলে আমৃত্য কাটিয়ে দিবো। আমার মউত এখানেই হোক আল্লাহর কাছে এটাই চাই। কি বেদনাদায়ক দৃশ্য। একটি সমাজ রাষ্ট্র কতটা ধ্বংসের পথে পরিচালিত হলে এমন দৃশ্য আমাদের দেখতে হয়।
ইসলাম কি চায় এ সমস্ত যন্ত্রণার মোকাবেলায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরিষ্কারভাবে তার নবী করিম (সা.) কে দিয়ে তার বাস্তব নমুনা নিজেই পেশ করেছেন। নবী (সা.) এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা শিক্ষণীয়। তার জন্ম থেকে ওফাত পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিষয় মানুষের জন্য শিক্ষনীয়। জীবনের সূচনালগ্নে তিনি নিজেই অসহায় একজন মানুষ ছিলেন। না তার কোন সহায় সম্বল ছিল। না তার পিতা-মাতা ছিলেন। তার অন্য একটা বড়ো ভাই নেই যে তাকে সাপোর্ট দিবে। এরকম সহায় সম্বলহীন একজন মানুষ হিসেবেই তিনি এজগতে বেড়ে উঠতে লাগলেন। সে সময়টা দেখেন তিনি নিজেই কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কারো ছাগল চড়িয়েছেন। কারো উট চড়িয়েছেন। কারো কূপ থেকে পানি তুলে তিনি আয় উপার্জন করেছেন। বহু পরিশ্রম করে হালাল উপায়ে উপার্জন করে নিজের জীবন ধারণ করেছেন। তিনি এতিম ছিলেন, তিনি কারো কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে পারতেন। কিন্তু নবীর চরিত্রের সাথে ভিক্ষা মানায় না। তিনি কখনো কারো কাছে আর্থিক সহায়তা চাননি। হ্যাঁ অভিভাবকের দায়িত্বের জায়গা থেকে যতদিন তার দাদা বেঁচেছিলেন ততদিন তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার ওফাতের পর চাচা আবু তালিব দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে বড়ো ধরনের কোন সাপোর্ট পেয়েছেন এটা নবীজির জীবনে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি আস্তে আস্তে বেড়ে উঠলেন। তার এই চারিত্রিক মাধুর্যতা, বিচক্ষণতা, তার সততা-আমানতদারি ও বুদ্ধিমত্তা এ সবগুলো বিবেচনায় নিয়ে খাদিজাতুল কোবরা (রা.) তাকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার ব্যবসা আগেও ভালো ছিল। রসুল (সা.) এর হাতে যখন ব্যবসার দায়িত্ব পড়লো, তখন আলহামদুলিল্লাহ! ব্যবসা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকলো এবং হু হু করে এ ব্যবসার নাম, যশ-খ্যাতি বাড়তেই থাকলো। এর কারণ ছিলো তার সততা, সত্যনিষ্ঠতা-আমানতদারিতার সাথে তার কঠোর পরিশ্রম প্রিয়তা। তিনি তার নির্ধারিত বেতনের বাহিরে অতিরিক্ত কোন অর্থ গ্রহণ করেননি। এবং নির্ধারিত বেতন নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলেন। যখন এরকমই ঘটলো তখন একটা পর্যায়ে খাদিজাতুল কুবরা (রা.) তিনি দুই স্বামী হারিয়ে বিধবা ও বিপুল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার একজন আশ্রয়ে একজন অভিভাবক প্রয়োজন ছিল। জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন ছিল। তিনি নিজে থেকেই রসুল (সা.) কে প্রস্তাব দিয়েছেন। রসুল করিম (সা.) এর চরিত্রে আকৃষ্ট হয়ে। এটা তথাকথিত অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ছিল না বরং তার চারিত্রিক দৃঢ়তায় তাকেই মুগ্ধ করেছিলো এবং নিজ থেকে মুগ্ধ হয়ে তিনি এ প্রস্তাব অভিভাবকের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। যাতে তিনি সঙ্গী হিসেবে পেতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা সেটা মঞ্জুর করেছেন। কবুল হয়েছে আল্লাহর দরবারে এবং পরবর্তী জীবনে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কাটিয়েছেন। কি রকম স্বামী-স্ত্রী! যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন ততদিন আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলের উপর ঈমান এনে তিনি তার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। শেষ জীবনটা তার দুঃখ কষ্টের দারিদ্রতায় কেটেছে। কিন্ত তাই নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো নেয়ামত তিনি হাসিল করেছেন। সেই নেয়ামত ছিল মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি তাকে নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। আর মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ (সা.) হযরত খাদিজাকে নিয়ে কেমন ছিলেন? যতদিন হযরত খাদিজা (রা.) বেঁচে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় কোন বিবাহ করেননি। বিয়ে তার একটাই, সঙ্গী তার একজনই। এমনকি হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.) দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তার পরবর্তী বিয়ে শাদী হলো। বিবিদেরকে তিনি বলতেন তোমরা যখন তোমাদের ঘরে কিছু রান্না করো একটু ঝোল বাড়িয়ে দিও। খাদিজার বান্ধবীদের ঘরে তার একটু অংশ পাঠিয়ে দিব। আয়েশা (রা.) রসুল (সা.) কে একদিন বলেন হে আল্লাহর রাসুল! তিনি তো বিধবা ছিলেন। তারপর আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে। বয়সে আপনার বড়ো ছিলো। আমরা তো ছোট আমরা তো বেশি বেশি স্নেহ আশা করতে পারি। আমরা কুমারী ছিলাম, রসুলে করিম (সা.) তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, কখনো খাদিজার সমান হতে চেষ্টা করবা না, পারবা না! পারবা না! কখনো পারবা না! খাদিজা আমার জীবনের কঠিন সময়ের সঙ্গী। তাছাড়া আল্লাহর দ্বীনের জন্য তার সবকিছু সে উজাড় করে দিয়েছে। তার সাথে নিজেকে মিলাও অসম্ভব এটা হবে না, কখনোই হবে না। আলহামদুলিল্লাহ! কোথা থেকে হযরত খাদিজার প্রতি রসুলের মহব্বত পয়দা হয়েছিল। মহব্বত পয়দা হয়েছিলো একজন দায়িত্বশীল কর্মচারী হিসেবে। রসুলে করিম (সা.) কে যেভাবে তিনি পেয়েছিলেন তিনি তখন নিজের থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উনাকে কর্মচারীর মর্যাদায় রাখা শোভনীয় নয়। তার আরও কিছু দরকার, এটা তার প্রাপ্য, সেই প্রাপ্য থেকেই হযরত খাদিজা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে শ্রমিক এবং মালিক উভয়ের দায়িত্ব বোধের একটা চমৎকার একটি সম্মিলন গড়ে উঠেছে।
আমার সম্মানিত ভাইয়েরা, এই অঙ্গনে আমরা যারা কাজ করি আমরা বলি যে আমরা এখানে শ্রেণি বিভক্ত তৈরি করতে চাই না। আমরা মালিকের পুঁজি ও মেধার সাথে শ্রমিকের শ্রমের সম্বনয় ঘটিয়ে উভয়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা দিয়ে ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। মালিক তার শ্রমিককে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে শ্রমিক তার মালিককে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। এখানে একটি বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি হবে। আমরা দেখি মাঝেমধ্যে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পাওয়ার জন্য তারা রাস্তায় নামে। তারা কাজ বন্ধ করে মিছিল করে। তারা উত্তেজিত হয়ে মাঝে মধ্যে কিছু আক্রমণ করে বসে। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দায়ী করা যায় না। কেননা সময়মত ন্যায্য পাওনা না পাওয়ার কারণে ক্ষুধার তাগিদে পেটে আগুন জ্বললে অনেক সময় মানুষের হুশ কাজ করে না। এখানে মালিকপক্ষ দায়ী। মালিকের জীবন চলতে যেমন অর্থের সংকলন প্রয়োজন হয় ঠিক একইভাবে শ্রমিকের ছোট্ট পরিবার চালাতেও অর্থের প্রয়োজন হয়। সে তো ভাই আপনার মত লাখ লাখ টাকা চাচ্ছে না। তার যে কয়টা হাতেগোনা টাকা আপনার কাছে পাবে সেটা কেন দিচ্ছেন না? এই অসন্তুষ্টির জায়গায় তৈরি হওয়া ইসলামের কোন সুযোগ নেই। কারণ রসুল করিম (সা.) এর স্পষ্ট কথা হচ্ছে শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগে তাকে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও। এই হাদিস এটা বোঝাচ্ছে না যিনি মাসিক ভিত্তিতে কাজ করছেন তাকে প্রতিদিনই তার ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পরে তার হাতে টাকা তুলে দিতে হবে।
সম্মানিত ভাইয়েরা, এখানে একটি জিনিস লক্ষণীয় আট ঘণ্টার কথা বলেছি। অনেক সময় অনেক শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজ করে তার সংসারে ঘানি কোনভাবেই তিনি টানতে পারেন না। তার চাহিদা পূর্ণ করতে পারেন না। ফলে তাকে ১৬-২০ ঘণ্টাও তাকে শ্রম বিনিময় করতে হয়। কিন্তু তিনি তো একজন মানুষ। মানুষের সর্বোচ্চ পরিধি বলে একটা কথা আছে। একটা সময়ই মানুষটা অল্প বয়সেই দুর্বল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে এই মানুষটা তার পরিবারের জন্য আরেকটা বোঝায় পরিণত হয় এবং এর জন্য সমাজ দায়ী। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করার পরেও যদি মানুষটা পরিবার চালাতে না পারে কেমনে চলে? হ্যাঁ এখানেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। হতে পারে তিনি এমন একটা কর্মে নিয়োজিত আছেন যেখানে মালিক এর চাইতে বেশি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাহলে উনার এটা দিয়ে চলে না আর ঐদিকে মালিকের সামর্থ্য নাই। এখানে সমাধান কি হবে? সমাধান হলো যে সমস্ত অর্থ বিত্তশালীরা, যে সমস্ত সামর্থ্যবান মানুষেরা এই শ্রমিকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের তৈরি করা ঘরে বসবাস করতেছেন। রাস্তা যারা নির্মাণ করে, সেই শ্রমিকের ঘাম ঝরানো শক্তি উজাড় করে বিনিয়োগের মাধ্যমে যে ফিনফিনা রাস্তা তৈরি হয়েছে, যার উপর দিয়ে যারা হাঁটেন সরকার তাদের কাজ থেকে যথাযথভাবে যাকাত আদায় করবে, পর্যাপ্ত কর আদায় করবে। কর আদায়ে কারো প্রতি জুলুম করবে না আবার কাউকে ছাড়ও দিবে না। যাকাতের ব্যাপারেতো কোন কানাকড়ি ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। যখন ইনসাফ ভিত্তিকভাবে সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে সেই টাকা আদায় করা হবে তখন সামর্থ্যবানরা আর বিদেশে টাকা পাচার করতে পারবে না এবং তাদের টাকা পাচার করার কোন প্রয়োজন হবে না। তখন দেশের টাকা দেশেই থাকবে। আর শ্রমিক তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাওয়ার পরে যদি তার চাহিদা পূর্ণ না হয়, তখন রাষ্ট্র যে কর আদায় করবে সেখান থেকে শ্রমিকদের বিশেষ ভাতা দিবে। এখানে ত্রিপক্ষের দায়িত্ব। এখানে মালিক, শ্রমিক ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন একটি রাষ্ট্র ইসলামী যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যখন ঐ রাষ্ট্রে যাকাত নেওয়ার মতো কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন ব্যক্তিগতভাবে কোন মানুষকে যাকাত না দিয়ে তখন জনকল্যাণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে যাকাতের টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তা দিয়ে দাওয়ার কাজ সম্প্রসারিত হয়েছে অন্য দেশে।
সম্মানিত ভাইয়েরা, এরকম একটি রাষ্ট্রের নাগরিক যারা হতে পারেন তারা আসলেই সৌভাগ্যবান। তারা আসলেই গর্বিত। বাংলাদেশে আমরা এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা চাচ্ছি। এমন একটাই শ্রমিকবান্ধব, মালিকবান্ধব পরিবেশ চাচ্ছি। এই যে এখন মালিকরা কর দেয় না ফাঁকি দেয়। এজন্য সরকার দায়ী। কিছু ক্ষেত্রে সরকার তার দায় অস্বীকার করতে পারবেন না। কিছু ক্ষেত্রে মালিকের লোভ, অসতর্কতা আর কিছু ক্ষেত্রে সরকারের লোভ এবং অসতর্কতা ও জুলুম দায়ী। রাষ্ট্র যখন ব্যক্তির উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেয় তখন ব্যক্তি অসাধু রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে হাত মিলিয়ে অসৎ পথ অবলম্বন করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যক্তি ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলে। এটি তাদের জন্য বিষফোঁড়া। বিষফোঁড়া দেহের জন্য মানায় না। এটি দেহের অংশ হয়ে গেলেও দেহ এটাকে সহ্য করতে পারে না। দেহকে অনবরত কষ্ট দেয়। শেষ পর্যন্ত এটাকে কেটে ফেলতে হয়। অনেক সময় আর্থিক এই দুর্নীতির কারণে অনেক মানুষ জেলে যায়। কেউ দেশ ছাড়া হয়। কেউ সমাজে আত্মগোপন করে। এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। এ সবগুলো হলো ধ্বংসের পথ।
এই ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র সমাধান হচ্ছে ইসলাম। ইসলামী শরিয়াকে যারা অনুসরণ করবে তাদের জীবনে, এ অভিশাপ আসার কোন সুযোগ নেই। কেউ থাকবে গাছ তলায় আর কেউ থাকবে পাঁচ তলায় এ সমাজে এটা হবে না। এ সমাজে ন্যূনতম একটি ভারসাম্য থাকবে। এটা ঠিক যে সকলেই বড়ো বড়ো কোন প্রাসাদের মালিক হবে না। কিন্তু এটা ঠিক এ রাষ্ট্রের সকলেই ইজ্জতের সাথে বসবাস করার সুযোগ হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিক স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবে এবং রাষ্ট্র মালিক-শ্রমিকের মাঝে সম্বনয় সাধন করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এরকম একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায়। শ্রমিক ময়দানে একটি আদর্শিক পরিবেশ তৈরির অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই এই সংগঠনের কাজকে শুধু শ্রমিকদের মধ্যে নয়। এই সংগঠনকে মালিক পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে ভাই আমি তোমাদের শুভাকাক্সক্ষী, আমি তোমার ভালো চাই। আমি তোমার দুনিয়ায় ভালো চাই। আমি তোমার আখেরাতও ভালো চাই।
শ্রমিকরা যখন তার শ্রম নিয়োগ করবে তখন সে কাজে ফাঁকি দিবে না। এ ক্ষেত্রটা আছে বলেই তিনি চাকরি পেয়েছেন। যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তার জীবিকা নির্বাহ হয় সে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি একজন শ্রমিক কোনভাবেই করতে পারে না। এখানে শ্রমিকেরও দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। শ্রমিক মনে করবে আমার প্রতিষ্ঠান বেঁচে থাকলে আমি বেঁচে থাকবো। আমার প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হলে আমার উন্নতির আশা বেঁচে থাকবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান যদি অধঃপতনের দিকে যায় তাহলে এ প্রতিষ্ঠান আমার জন্য সহায়ক হবে না। অতএব শ্রমিক তার প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ চাইবে আর মালিক হবে শ্রমিকদের কল্যাণ আর রাষ্ট্র হবে উভয়ের দায়িত্বশীল এবং সমন্বয় করবে। এভাবে যদি আমরা শ্রমিক ময়দানে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি আল্লাহর মেহেরবাণীতে ইনশাআল্লাহ আমরা শ্রমিকবান্ধব সহায়ক পরিবেশ পাবো। আমি বরাবর বলে থাকি এই ময়দানের ভাইদের কাজ হচ্ছে রুকন বা কর্মী বৃদ্ধি করা নয়। এই ময়দানের ভাইদের কাজ হচ্ছে ইসলাম ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব শ্রমিক ময়দানে তুলে ধরা এবং প্রমাণ করা। এই জায়গাটা তুলে ধরতে হলে প্রমাণ করতে হলে শ্রমিক ময়দানে কাজের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এই পদ্ধতি হলো ট্রেড ইউনিয়ন। সেই ট্রেড ইউনিয়নের দিকে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই জায়গাতে বেশ কিছু উন্নতি সাধিত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে ট্রেড ইউনিয়ন করতে গিয়ে তাড়াহুড়া করা যাবে না। এবং অযোগ্য লোকদের হাতে ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া যাবে না। এই দুটি কাজ আমাদের দ্বারা হয়ে গেলে সময়ের ব্যবধানে ট্রেড ইউনিয়ন সম্পদ না হয়ে আমাদের জন্য আপদে পরিণত হবে। তখন আপনি যে কাজটাকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন সেটা আপনার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াবে। আগে মানসম্মত লোক তৈরি করতে হবে। অতঃপর তার হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। যিনি সততা, দক্ষতা ও আমানতের সাথে দ্বীনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের আঞ্জাম দিয়ে যাবেন। এর ব্যতয় ঘটলে এই জগতে ফিতনা তৈরি হবে। আমরা এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আরও পিছিয়ে পড়বো। এই জন্য শুরু থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
শ্রমিক কল্যাণের নেতৃবৃন্দকে মালিকপক্ষের সাথে সৌহার্দমূলক সম্পর্কে পৌঁছাতে হবে। মালিকদের বিশ্বাস করাতে হবে এই সংগঠন কেবল শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করে না বরং মালিক-শ্রমিক উভয়ের স্বার্থে কাজ করে। তাহলে মালিকপক্ষ সকল ধান্দাবাজদের থেকে বাঁচার জন্য এই সংগঠনের উপর নির্ভরশীল হবে। আপনাদের বাছাই করবে কল-কারখানায় নেতৃত্ব দিতে। এর মাধ্যমে ফেডারেশনের কাজের জায়গা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আপাতত আমি এই এরকম উন্নতি দেখতে পাইনি। অন্তত আমার কাছে এই রকম কাজ হয়েছে তার কোন রিপোর্ট নেই। আমি এক্ষেত্রে নজর দেওয়ার জন্য মূল দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করছি।
সংগঠন কতটুকু এগিয়ে যাবে আজকে এখানে যারা আছেন তাদের অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করবে। তারা কিভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চায়। এই মানুষগুলো যদি আল্লাহর জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে তাহলে এ ময়দান কথা বলবে ইনশাআল্লাহ। এখন তার পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে। এবার আমাদের সাধারণ যে গণসংযোগ পক্ষ পালন হলো। আলহামদুলিল্লাহ! সারাদেশ থেকে আমরা যে সাড়া পাচ্ছি তা অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। কোথাও কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাইনি। বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা এখন আমাদের সংগঠনে শামিল হচ্ছেন। হয়তোবা তারা আস্থার একটা ঠিকানা খোঁজ করছেন। এবং মনে করছেন, আমাদের পথ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি, মানুষগুলো যেন আরও বেশি আশাবাদী হতে পারে আমাদের আচরণ এবং কর্মে। এই ঠিকানায় এসে নতুন করে তারা হতাশাগ্রস্থ না হয়, হতাশ জেনো না হয়। আল্লাহ তায়ালা সেই দুর্বলতা থেকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুক। আমি শ্রমিক ময়দানে কাজ করা এই ভাইদেরকে বিশেষ অনুরোধ করবো। আপনারা দুটি জিনিস খেয়াল রেখে কাজ করবেন।
প্রথমত হচ্ছে মূল সংগঠনের সাথে সবসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে কাজ করবেন। কোন তথ্যের গ্যাপ যেন না থাকে। মূল দায়িত্বশীলকে পর্যাপ্ত তথ্য দিবেন। তাহলে তার পক্ষে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা তিনি দিবেন অত্যন্ত সাচ্ছন্দে। এখানে যদি যোগাযোগের সম্পর্কের কোন গ্যাপ থাকে তাহলে ভাই কাজ এগিয়ে যাবে না।
দ্বিতীয়ত নাম্বার হচ্ছে আপনার জীবনের একটা ব্যক্তিগত পরিকল্পনা থাকবে। আপনি যে সেক্টরের যে বিভাগের সুযোগ পেয়েছেন কাজ করার তদারকি করার। যেটিই আপনার দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের জন্য সংগঠনের একটি প্লান আছে কিংবা আপনার একটি ব্যক্তিগত প্লান আছে। যে আপনি কোন মানুষটাকে কোথায় তৈরি করতে চান। সংগঠন বলে দিবে এ মানের এতজন মানুষ লাগবে এইমানের এতটা ইউনিট লাগবে কিন্তু মানুষটা কে হবে এটা তো সংগঠন বলে দিবে না এ পরিকল্পনা আপনার। আপনি কোন জায়গায় কোন মানুষটাকে তৈরি করতে চান তা আপনি ঠিক করবেন। মনে রাখবেন মানুষই সব কিছু মানুষের জন্য আল্লাহ সবকিছু, আল্লাহ তামাম জগতটাকে মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি করেছেন সুতরাং মানুষই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই মানুষটা আপনাকে তৈরি করতে হবে।
তৃতীয়ত হচ্ছে যে কাজটাই করবেন এখলাসের সাথে করবেন শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্টির জন্য করবেন। কোন ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলকে সন্তুষ্ট অসন্তুষ্ট কোন পরওয়া করবেন না। কাঙাল হবেন না, কাঙাল হবেন একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমার সব কাজে আমি যেন আল্লাহকে খুশি করতে পারি। আমার আল্লাহ যদি অসন্তুষ্ট হন তাহলে আমার সব শেষ। এই তিনটা জিনিস বিবেচনা নিয়ে যদি আমাদের দায়িত্বশীল সহকর্মী বন্ধুগণ কাজ করেন আমি গভীর ভাবে বিশ্বাস করি যে আল্লাহ তায়ালা বারাকাহ দিবেন। কল্যাণের একটি পরিবেশ সর্বক্ষেত্রে আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। কল্যাণ মাথায় আসলে আমাদের বাজেটে চলে আসে। বাজেট কখনো সফলতার মাপকাঠি না। আপনি যদি লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। বাজেট সব জায়গায় লাগে না। অধিকাংশ জায়গায় লাগে না। বিনা বাজেটই মানুষের অনেক কল্যাণ হয়ে গেছে। আর বাজেট যেখানে লাগবে সেখানে সামর্থ্য অনুযায়ী করা হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু প্রথমেই বাজেটের চিন্তা করলে কোনো কল্যাণের কাজ আপনি করতে পারবে না। এ সমস্ত বিষয়ে সামনে রেখে আল্লাহতালা প্রিয় এই সংগঠনকে আগামী দিনের প্রত্যাশার মঞ্জিল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার তাওফিক আমাদের দান করুন। আমিন।
(জেলা ও মহানগরী কার্যনির্বাহী কমিটির সম্মেলনে ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা. শফিকুর রহমান-এর প্রধান অতিথির বক্তব্য)