বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন , বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিকদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যেগে রাজধানীর এক মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এই কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা মিঠুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও দফতর সম্পাদক নুরুল আমীন। এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরী কার্যকরী পরিষদের সদস্য শ্রমিক নেতা আবু হানিফ,খিজির আহমেদ,আমিনুল ইসলাম। শ্রমিক নেতা সামিউল ইসলাম,আব্দুর রহিম মানিক প্রমুখ।
তিনি বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে উঠা ভাষা আন্দোলনে চাকুরীজীবী মধ্যবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ শামিল হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলন ঢাকা শহরসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ৫২-র ভাষা আন্দোলন সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করে, আর এই আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন শ্রমিক-জনতা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভাষা আন্দোলনে যারা আহত এবং শহীদ হয়েছেন তাদের অধিকাংশ ছিলেন শ্রমিক। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার ছিলেন সাধারণ গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষ, আব্দুস সালাম ডাইরেক্টর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার পদে চাকরি করতেন,আব্দুল আউয়াল ছিলেন একজন রিকশাচালক, রফিকউদ্দিন ছিলেন একজন ছাপাখানার কর্মচারী। এ থেকে বুঝা যায় ভাষা আন্দোলনের কোনো একক রাজনৈতিক নেতা ও নায়ক ছিল না। ছাত্র শ্রমিক জনতাই ছিলেন তার প্রকৃত নায়ক।
তিনি আরও বলেন- ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মাওলানা ভাসানী কৃষক সমিতি, মৎস্যজীবী সমিতি, তাঁত সমিতি, অটো রিকশা সমিতি এসব গঠন করে মেহনতি শ্রমজীবী মানুষকে সু-সংগঠিত করেছিলেন। কারণ সাধারণ শ্রমিক যে দিকে ধাবিত হয় আন্দোলনের সফলতা সেদিকে ধাবিত হয়। ইতিহাসের সকল আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণির ত্যাগ অবিস্মরণীয় যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে ৫২-র ভাষা আন্দোলন। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মানচিত্রে একটি জাতির অভ্যুদয় হয়েছে। কিন্ত দুঃখের বিষয় যারা মাতৃ ভাষা বাংলার জন্য জীবন দিল সেই শ্রমিকদের অবদান আজ পর্যন্ত যথাযথভাবে স্মরণ করা হয় না, এমনকি ভাষা সৈনিক ও শহীদের পরিবারের প্রতিও হচ্ছে দারুন অবহেলা এবং ভাষা সৈনিকদের আহবান ও দাবীকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনি ভাষার বিকৃতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস চর্চায় সরকারসহ সকলের প্রতি আহবান জানান।