শ্রম আইনে অসদাচরণ অপরাধের শাস্তি দণ্ড
১। প্রশ্ন: কোন শ্রমিককে বিনা নোটিশে বা নোটিশের পরিবর্তে বিনা মজুরিতে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা যাইবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৩ ধারায় অসদাচরণ এবং দণ্ডপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। ১ উপধারায় বলা হয়েছে, এই আইনে লে-অফ, ছাঁটাই, ডিসচার্জ এবং চাকুরীর অবসান সম্পর্কে অন্যত্র যাহা কিছুই বলা হউক না কেন, কোন শ্রমিককে বিনা নোটিশে বা নোটিশের পরিবর্তে বিনা মজুরিতে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা যাইবে, যদি তিনি-(ক) কোন ফৌজদারী অপরাধের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হন; অথবা (খ) ধারা ২৪ এর অধীন অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
২। প্রশ্ন: শ্রম আইনের একজন শ্রমিকের কি ধরনের শাস্তি হতে পারে?
উত্তরঃ শ্রম আইনের ২৩ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোন শ্রমিককে উপ-ধারা (১) এর অধীন চাকুরী হইতে বরখাস্তের পরিবর্তে, বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, নিম্নলিখিত যে কোন শাস্তি প্রদান করা যাইবে, যথা:
(ক) অপসারণ;
(খ) নীচের পদে, গ্রেডে বা বেতন স্কেলে অনধিক এক বৎসর পর্যন্ত আনয়ন;
(গ) অনধিক এক বৎসরের জন্য পদোন্নতি বন্ধ;
(ঘ) অনধিক এক বৎসরের জন্য মজুরি বৃদ্ধি বন্ধ;
(ঙ) জরিমানা;
(চ) অনধিক সাত দিন পর্যন্ত বিনা মজুরিতে বা বিনা খোরাকীতে সাময়িক বরখাস্ত;
(ছ) ভৎসনা ও সতর্কীকরণ।
৩। প্রশ্ন: শ্রম আইনে শ্রমিককে শাস্তি দেওয়ার আগে কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৪ ধারায় শ্রমিকের শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। নিম্মে বিষয়গুলি তুলে ধরা হলো
(ক) শ্রমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখিতভাবে করতে হবে।
(খ) অভিযোগের একটি কপি শ্রমিককে দিতে হবে এবং ইহার জবাব দেওয়ার জন্য অন্তত সাতদিন সময় দিতে হবে।
(গ) শ্রমিকের বক্তব্য শুনানির সুযোগ দিতে হবে।
(ঘ) মালিক বা শ্রমিকের সমসংখ্যক প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের পর তাহাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়; তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত তদন্ত ষাট দিনের মধ্যে শেষ করিতে হইবে।
৪। প্রশ্ন: কোন শ্রমিক দোষী সাব্যস্ত হলে কোন পাওনা পাবে কি?
উত্তর: এই বিষয়টি শ্রম আইনের ২৪ ধারার ৬ ও ৭ উপধারায় আলোচনা করা হয়েছে। ৬ উপধারায় আছে, যদি তদন্তে কোন শ্রমিককের দোষ পাওয়া যায় এবং তাহাকে ধারা ২৩(১) এর অধীন শাস্তি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তিনি তাহার সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ের জন্য কোন মজুরি পাইবেন না, তবে উক্ত সময়ের জন্য তাহার খোরাকি ভাতা প্রাপ্য থাকিবে।
৭ উপধারায় আছে, যদি তদন্তে কোন শ্রমিকের অপরাধ প্রমাণিত না হয়, তাহা হইলে তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে কর্মরত ছিলেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং ঐ সময়ের জন্য তাহার, খোরাকি ভাতা সমন্বয়সহ, মজুরি প্রদেয় হইবে।
৫। প্রশ্ন: কোন শ্রমিক দোষী সাব্যস্ত হলে কি পরিমাণ জরিমানা হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৫ ধারায় শ্রমিকের জরিমানার বিধান আলোচনা করা হয়েছে।
১ উপধারায় বলা হয়েছে, কোন মজুরি মেয়াদে প্রদেয় মজুরির এক দশমাংশের অধিক পরিমাণ অর্থ কোন শ্রমিককে জরিমানা করা যাইবে না।
২ উপধারায় বলা হয়েছে, পনের বৎসরের কম বয়স্ক কোন শ্রমিকের উপর জরিমানা আরোপ করা যাইবে না।
৫ উপধারায় বলা হয়েছে, সকল জরিমানা এবং উহার আদায় বিধি দ্বারা নির্ধারিত একটি রেজিস্টারে মালিক কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা হইবে, এবং আদায়কৃত জরিমানা কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকগণের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাইবে।
৬। প্রশ্ন: বেআইনি ও লক-আউট করলে শ্রমিকের কি দণ্ড হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৯৪ ধারায় বেআইনি ও লক-আউটের দণ্ড সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
১ উপধারায় শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন শ্রমিক কোন বেআইনি ধর্মঘট শুরু করিলে, অথবা চালাইয়া গেলে, অথবা উহাকে আগাইয়া নেওয়ার জন্য কোন কাজ করিলে, তিনি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন ।
৭। প্রশ্ন: বেআইনি ও লক-আউটে প্ররোচিত করার দণ্ড হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৯৫ ধারায় বেআইনি ও লক-আউটে প্ররোচিত করার দণ্ডসমার্পকে আলোকপাত করা হয়েছে।
কোন ব্যক্তি কোন বেআইনি ধর্মঘট বা লক-আউটে অংশ গ্রহণের জন্য অথবা উহার জন্য অর্থ খরচ বা সরবরাহের জন্য অথবা অন্য কোন ভাবে উহাকে আগাইয়া নেওয়ার জন্য কোন ব্যক্তিকে প্ররোচিত বা উৎসাহিত করিলে, তিনি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন ।
৮। প্রশ্ন: ঢিমে তালে কাজে অংশগ্রহণ বা প্ররোচিত করার দণ্ড কি?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৯৬ ধারায় ঢিমে তালে কাজে অংশগ্রহণ বা প্ররোচিত করার দণ্ড কি তা বলা হয়েছে।
কোন ব্যক্তি কোন ঢিমে তালের কাজে অংশগ্রহণ করলে অথবা অন্য কোন ব্যক্তিকে উহাতে অংশ গ্রহণে প্ররোচিত বা উৎসাহিত করিলে অথবা অন্য কোন ভাবে উহাকে আগাইয়া নেওয়ার জন্য কোন কাজ করিলে, তিনি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৯। প্রশ্ন: অ-রেজিষ্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকান্ডের দণ্ড কি?
উত্তর: শ্রম আইনের ২৯৯ ধারায় অ-রেজিষ্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকান্ডের দণ্ডসর্ম্পকে বলা হয়েছে।
কোন ব্যক্তি অ-রেজিষ্ট্রিকৃত অথবা রেজিষ্ট্রি বাতিল হইয়াছে এমন কোন ট্রেড ইউনিয়নের, রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি সংক্রান্ত কোন কর্মকাণ্ড ব্যতিত, অন্য কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিলে অথবা অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্তরূপ কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণের জন্য উৎসাহিত বা প্ররোচিত করিলে অথবা উক্তরূপ কোন ট্রেড ইউনিয়নের তহবিলের জন্য সদস্য চাঁদা ব্যতিত অন্য কোন চাঁদা আদায় করিলে, তিনি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন
১০। প্রশ্ন: ট্রেড ইউনিয়নের দ্বৈত সদস্য পদের দণ্ডকি?
উত্তর: শ্রম আইনের ৩০০ ধাারায় বলা উল্লেখ আছে। কোন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হইলে বা থাকিলে, তিনি ১ এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
১১। প্রশ্ন: শ্রমিকগনের সাধারণ অপরাধের দণ্ড কি?
উত্তর: শ্রম আইনের ৩০৫ ধারায় শ্রমিকগনের সাধারণ অপরাধের দণ্ড কি হবে তা উল্লেখ আছে। এই আইনের অন্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কোন শ্রমিক তাহার উপর দায়িত্ব বা কর্তব্য আরোপকারী কোন আইন বা কোন বিধি, প্রবিধান বা স্কীম বা কোন বিধি সম্মত আদেশের কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে, তিনি পাঁচশত টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
লেখক: সহসাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন