১. প্রশ্ন: শ্রমিকদের চাকরির অবসান কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর: শ্রম আইনে ৬ ভাবে একজন শ্রমিকের চাকরির অবসান হতে পারে। শ্রমিক ২ ভাবে চাকরির অবসান করতে পারে এবং মালিক ৪ ভাবে চাকরির অবসান করতে পারে।
মালিক ৪ ভাবে চাকরির অবসান করতে পারবে। যথা
১.ছাঁটাই
২.ডিসচার্জ
৩.বরখাস্ত
৪.টার্মিনেশন
শ্রমিক ২ ভাবে চাকরির অবসান করতে পারবে। যথা
৫.ইস্তফা
৬.অবসর
২. প্রশ্ন: শ্রমিক কর্তৃক চাকরীর অবসান কীভাবে হয় এবং কী সুবিধা পাওয়া যায়?
উত্তর: বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৬ ধারায় মালিক কর্তৃক শ্রমিকের চাকুরি অবসান সম্পর্কিত বিধানাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। আর একই আইনের ২৭ ধারায় শ্রমিক কিভাবে তার মালিকের নিকট চাকরির অবসান করবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। পূর্বে শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের ১৯ ধারায় মালিক কর্তৃক শ্রমিককে এবং শ্রমিক কর্তৃক মালিকের নিকট চাকরির অবসান করার বিধানসমূহ একত্রে সন্নিবেশিত ছিল। বর্তমান আইনে ২৬ ও ২৭ দু’টি ভিন্ন ধারায় তা বর্ণনা করা হয়েছে।
এই আইনের ২৭ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী কোন স্থায়ী শ্রমিক মালিককে ষাট দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করে তার চাকুরী হতে ইস্তফা দিতে পারবেন। এই ধারার ২ উপধারায় আরও বলা হয়েছে যে, যদি কোন অস্থায়ী শ্রমিক মাসিক বেতন পান সেক্ষেত্রে তিনি ত্রিশ দিনের নোটিশ প্রদান করে তার চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে পারবেন। আর অস্থায়ী শ্রমিক মাসিক বেতনে নিযুক্ত না হলে সেক্ষেত্রে তিনি ১৪ দিনের নোটিশ দিয়ে তার চাকুরী থেকে ইস্তফা দিতে পারবেন।
তবে ২৭ ধারার ১ অথবা ২ উপধারায় বর্ণিত বিধান মতে নোটিশ না দিয়ে বিনা নোটিশে কোন শ্রমিক চাকুরী থেকে ইস্তফা দিতে চাইলে সেক্ষেত্রে তাকে নির্ধারিত নোটিশ মেয়াদের পরিবর্তে মালিককে নোটিশ প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ সমপরিমাণ মজুরী মালিককে প্রদান করবেন।
২৭ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী কতিপয় ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রমিক চাকুরী থেকে ইস্তফা দিলে মালিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে যদি শ্রমিক পাঁচ বছর বা তার চেয়েও বেশি কিন্ত দশ বছরের কম সময় অবিচ্ছিন্নভাবে মালিকের অধীনে চাকরি করে থাকেন তাহলে প্রতি সম্পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য উক্ত শ্রমিক ১৪ দিনের হারে মজুরি পাবেন। আর চাকরির বয়স যদি দশ বছর বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে শ্রমিক সেক্ষেত্রে প্রতি সম্পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য ত্রিশ দিনের হারে মজুরি পাবেন। তবে গ্রাচ্যুয়িটির বিধান থাকলে এবং তা ক্ষতিপূরণের চেয়ে বেশি হলে তা শ্রমিক মালিকের নিকট থেকে পাবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, ক্ষতিপূরণ এই আইনের আওতায় শ্রমিকের পাওনা অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হবে।
৩. প্রশ্ন: মালিক একজন শ্রমিককে কিভাবে ছাঁটাই করবে এবং ছাটাইকৃত শ্রমিক কী কী সুবিধা পাবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২০ ধারায় ছাঁটাই সম্পর্কে বলা হয়েছে;
১.কোন শ্রমিককে প্রয়োজনের অতিরিক্ততার কারণে কোন প্রতিষ্ঠান হতে ছাঁটাই করা যাবে।
২.কোন শ্রমিক যদি কোন মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে অন্যুন এক বছর চাকরিতে নিয়োজিত থাকেন, তাহলে তাকে ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে মালিক নিম্নলিখিত পদ্ধতি গ্রহণ করবেন;
(ক) ছাঁটাইয়ের কারণ উল্লেখ করে এক মাসের লিখিত নোটিশ দিবেন অথবা নোটিশের পরিবর্তে মজুরি প্রদান করবেন।
(খ) নোটিশের কপি শ্রম অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করবেন।
(গ) ছাঁটাইকৃত শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাকে প্রত্যেক বছরের চাকরির জন্য ত্রিশ দিনের মজুরি বা গ্রাচুইটি বা অধিক হয় তা প্রদান করবেন।
৪. প্রশ্ন: ডিসচার্জ কী? মালিক শ্রমিককে ডিসচার্জ করলে শ্রমিক কী কী সুবিধা পাবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২২ ধারায় ডিসচার্জ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ডিসচার্জ অর্থ একজন শ্রমিকের কর্মচ্যুতি। দৈহিক বা মানসিক অক্ষমতা অথবা ক্রমাগত ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে কোন শ্রমিককে কোন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক প্রত্যায়িত দিয়ে মালিক একজন শ্রমিককে কর্মচ্যুতি বা ডিসচার্জ করতে পারে।
শ্রম আইনের ২২ ধারার ২ উপধারায় ডিসচার্জকৃত শ্রমিকের প্রাপ্য সুবিধার কথা বলা হয়েছে। ডিসচার্জকৃত কোন শ্রমিক অন্যূন এক বছর অবিচ্ছিন্ন চাকুরী সম্পন্ন করলে তাকে মালিক তার প্রত্যেক বছরের চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ত্রিশ দিনের মজুরি অথবা গ্রাচ্যুয়িটি যেটা বেশি হবে সেটা প্রদান করবে।
৫. প্রশ্ন: শ্রম আইনে বরখাস্ত কী? একজন শ্রমিককে মালিক কিভাবে বরখাস্ত করতে পারবে এবং শ্রমিক কি ক্ষতিপূরণ পাবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২ ধারার ৩৯ উপধারায় বরখাস্ত সম্পর্কে বলা হয়েছে। বরখাস্ত অর্থ অসদাচরণের কারণে মালিক কর্তৃক কোন শ্রমিকের চাকরির অবসান।
শ্রম আইনের ২৩ ধারায় বলা হয়েছে- কোন শ্রমিককে বিনা নোটিশে বা নোটিশের পরিবর্তে বিনা মজুরীতে চাকরি হতে মালিক বরখাস্ত করতে পারবে। যদি শ্রমিক কোন ফৌজদারি অপরাধের জন্য দন্ডপ্রাপ্ত হন এবং শ্রম আইনের ধারা ২৪ এর অধীন কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
বরখাস্তকৃত শ্রমিকের প্রাপ্ত সুবিধা;
শ্রম আইনের ২৩ ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে; বরখাস্তকৃত শ্রমিককে তার প্রত্যেক পূর্ণ চাকরির বছরের জন্য চৌদ্দ দিনের মজুরি অথবা গ্রাচ্যুয়িটি যা অধিক হবে তা প্রদান করতে হবে।
৬. প্রশ্ন: টার্মিনেশন কী? মালিক শ্রমিককে টার্মিনেশন করলে শ্রমিক কী সুবিধাপ্রাপ্ত হয়?
উত্তর: দরখাস্ত, ইত্যাদি ব্যতীত অন্যভাবে মালিক কর্তৃক শ্রমিকের চাকরির অবসানকে টার্মিনেশন বলে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এই ধারাকে কালাকানুন আইন বলে চিহ্নিত করেছে এবং এই আইনের পরিবর্তনের দাবি রাখে।
বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৬ ধারায় টার্মিনেশন সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই ধারা ব্যবহার করে একজন মালিক তার ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেকোন শ্রমিককে যখন-তখন কোন কারণ দর্শানো ব্যতীত চাকরির অবসান করতে পারে। এই আইনে বলা হয়েছে;
(ক) মাসিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১২০ দিনের নোটিশ,
(খ) অন্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের নোটিশ
উপধারা ৩ এ বলা হয়েছে, যেক্ষেত্রে বিনা নোটিশে কোন শ্রমিককে চাকরির অবসান করিতে চায়, সেক্ষেত্রে মালিক উপধারা ১ অথবা ২ এর অধীন প্রদত্ত নোটিশের পরিবর্তে ১২০ দিন অথবা ৬০ দিনের মজুরি প্রদান করবেন।
৪ উপধারায় বলা হয়েছে কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকরির অবসান করার ক্ষেত্রে মালিক শ্রমিককে তার প্রত্যেক বছরের চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের মজুরি অথবা গ্রাচ্যুয়িটি যা অধিক হবে তা প্রদান করবে এবং এই ক্ষতিপূরণ এই আইনের শ্রমিককে প্রদেয় অন্যান্য সুবিধা অতিরিক্ত হবে।
৭. প্রশ্ন: ইস্তফা কী? একজন শ্রমিক চাকরি থেকে কী কী সুবিধাপ্রাপ্ত হয়?
উত্তর: (১) কোন স্থায়ী শ্রমিক মালিককে ষাট দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করিয়া তাহার চাকরি হতে ইস্তফা দিতে পারবেন।
(২) কোন অস্থায়ী শ্রমিক-(ক) মাসিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে, ত্রিশ দিনের, (খ) অন্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে, চৌদ্দ দিনের;
লিখিত নোটিশ মালিকের নিকট প্রদান করিয়া তাহার চাকরি হইতে ইস্তফা দিতে পারিবেন।
(৩) যে ক্ষেত্রে শ্রমিক বিনা নোটিশে চাকরি হইতে ইস্তফা দিতে চাহেন সেক্ষেত্রে, তিনি উপ-ধারা (১) অথবা (২) এর অধীন প্রদেয় নোটিশের পরিবর্তে নোটিশ মেয়াদের জন্য মজুরির সমপরিমাণ অর্থ মালিককে প্রদান করিয়া ইহা করিতে পারিবেন।
(৩ক) উপধারা (৩) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন শ্রমিক বিনা নোটিশে অথবা বিনা অনুমতিতে ১০ দিনের অধিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকিলে মালিক উক্ত শ্রমিককে ১০ দিনের সময় প্রদান করিয়া এই সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করিতে এবং চাকরিতে পুনরায় যোগদানের জন্য নোটিশ প্রদান করিবেন এবং এইরূপ ক্ষেত্রে উক্ত শ্রমিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান ও চাকুরিতে যোগদান না করিলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে তাহার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আরও ৭ দিন সময় প্রদান করিবেন। তাহাতেও যদি সংশ্লিষ্ট শ্রমিক চাকুরীতে যোগদান অথবা আত্মপক্ষ সমর্থন না করেন তবে, উক্ত শ্রমিক অনুপস্থিতির দিন হইতে [চাকরি হইতে ইস্তফা দিয়েছেন] চাকরি হইতে অব্যাহতি গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।
(৪) যে ক্ষেত্রে এই ধারার অধীন কোন স্থায়ী শ্রমিক চাকরি হইতে ইস্তফা দেন সে ক্ষেত্রে মালিক উক্ত শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাহার প্রত্যেক সম্পূর্ণ বৎসরের চাকরির জন্য-
(ক) যদি তিনি পাঁচ বৎসর বা তদূর্ধ্ব, কিন্তু দশ বৎসরের কম মেয়াদে অবিচ্ছিন্নভাবে মালিকের অধীন চাকরি করিয়া থাকেন তাহা হইলে, চৌদ্দ দিনের মজুরি;
(খ) যদি তিনি দশ বৎসর বা তদূর্ধ্ব সময় মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে চাকরি করিয়া থাকেন তাহা হইলে, ত্রিশ দিনের মজুরি। অথবা গ্রাচ্যুইটি, যদি প্রদেয় হয়, যাহা অধিক হইবে, প্রদান করিবেন এবং ক্ষতিপূরণ এই আইনের অধীন শ্রমিককে প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হবে।
৮. অবসর কী? একজন শ্রমিকের বয়স কত বছর হলে কর্মস্থল হতে অবসর হবে?
উত্তর: শ্রম আইনের ২ ধারার ১ উপধারায় কোন শ্রমিকের ক্ষেত্রে অবসর বলতে কি বুঝায় তা বলা হয়েছে। শ্রম আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী কোন শ্রমিকের নির্দিষ্ট বয়স অর্থাৎ ৫৭ বছর পূর্ণ হলে স্বাভাবিক চাকরির অবসানকে বুঝায়। তবে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে সেক্ষেত্রে শ্রমিক স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলে তাও অবসর বলে বিবেচিত হবে। ২৮ ধারা মোতাবেক কোন শ্রমিকের চাকরি অবসর হলে তিনি ২৬ (৪) ধারায় এককালীন সুবিধা পাবে।
শ্রম আইনের ২৬ (৪) ধারার বর্ণনা মতে অবসর গ্রহণকারী শ্রমিক তার সম্পূর্ণ বছরের জন্য ত্রিশ দিনের মজুরি ক্ষতিপূরণ হিসেবে অথবা গ্রাচ্যুয়িটি থাকলে যা বেশি তা পাবেন এবং এই ক্ষতিপূরণ এই আইনের অধীন শ্রমিকের প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হবে।
লেখক: কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন