বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, দিন-রাত সমান তালে কাজ চালিয়ে একসঙ্গে চাতালের শ্রমিকরা ধান সিদ্ধ-শুকানো, চাল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকেন। কিন্তু তারা নূন্যতম বাচাঁর অধিকার এবং শ্রমের সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত। তাই চাতাল শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়, জীবনমান উন্নয়ন ও শ্রমের সঠিক মূল্য আদায়ে চাতাল শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত চাতাল সেক্টরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিয় সভায় সভাপতির বক্তব্য তিনি এই কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, চাতাল সেক্টরের সভাপতি ও বাংলাদেশ চাতাল শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রমিকনেতা আযহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন, আজিজুর রহমান, মোঃ মমতাজ আলী, সাধারণ সম্পাদক ড. জিয়াউল হক, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, মিজানুর রহমান, রংপুর অঞ্চল সভাপতি আব্দুল গণী, চট্রগ্রাম অঞ্চল সভাপতি ইউসুফ বিন আবু বকর, বগুড়া অঞ্চল সভাপতি এ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ ও বরিশাল অঞ্চল সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
জনাব শামসুল ইসলাম আরো বলেন, বেসরকারি হিসাবে দেশে প্রায় ৪০ হাজার চাতালে পাঁচ লাখের অধিক শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী চাতাল একটি কারখানা। এখানকার শ্রমিকরা মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। আইন অনুযায়ী এই শ্রমিকদের যা প্রাপ্য তা দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শ্রম আইনের কিছুই মানা হয় না। এমনকি সরকারের কোনো পরিদর্শক দলও এ শিল্প পরিদর্শনে যায় না।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং পরে সংশোধিত আইনটিতে চাতালশিল্পের কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে চাতাল শ্রমিকদের জন্য নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হয় ৪৯৫ টাকা। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও মজুরি পূর্ননির্ধারণ করা হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান বাজারে চালের দাম কয়েক দফা বাড়লেও চাল তৈরির প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত চাতাল শ্রমিকদের মজুরী বাড়েনি কখনো। সর্বক্ষেত্রেই চাতাল শ্রমিকরা আজ অবহেলিত ।
তিনি দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এই অবহেলিত শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার আদায় ও মজুরী বৈষম্য দূর করতে এই সেক্টরের কাজকে আরো গতিশীল করতে হবে। প্রতিটি শ্রমিকের কাছে যেতে হবে। চাতাল মালিক ও শ্রমিককে বুঝাতে হবে একমাত্র ইসলামী শ্রমনীতিই শ্রমজীবী মানুষের সব সমস্যার সার্বিক ও ন্যায়ানুগ সমাধানের দিকনিদের্শনা প্রদান করেছে। ইসলামী শ্রমনীতিই চায় শ্রমিক ও মালিকের সৌহার্দ্যমূলক পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এমন এক বিধানের প্রচলন করতে, যেখানে দুর্বল শ্রেনীকে শোষণ-নিপীড়নের জঘন্য প্রবণতা থাকবে না।
পরে মতবিনিময় সভায় সকলের সম্মতিক্রমে সরকারের কাছে ১১ দফা দাবী জানানো হয়:
১. চাতাল শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা ও তা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
২. চাতাল শ্রমিকদের জন্য নিয়োগ, যোগদানপত্র এবং পরিচয় পত্রের ব্যবস্থা করা।
৩. চাতাল শ্রমিকদের কাজের নির্ধারিত কর্মঘন্টা নির্ধারণ করা এবং ৮ ঘণ্টার অধিক কাজের জন্য ওভার টাইম ধরে মজুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. চাতালগুলো পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৫. সাপ্তাহিক ও বার্ষিক ছুটি এবং ঈদ বোনাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করা ।
৭. পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য দূর করা।
৮. চাতাল শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি কল্পে কর্ম এলাকায় থাকার জন্য আবাসন সুবিধা চালু করা।
৯.নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করা।
১০. শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অটোমিল শ্রমিকসহ সকল চাতাল শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
১১. সকল শ্রমিকদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করাসহ শ্রমিকদেরজন্য জীবন বীমার সুবিধা চালু করা।