দেশের মোট শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ কৃষি কাজে নিয়োজিত। কৃষি এখনো দেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা হিসাবে বহাল রয়েছে। অধিকাংশ জনগণই জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর। কিন্তু ক্রমাগত অবহেলা এবং ন্যায্য মূল্যে না পাওয়ার কারণে পুরো কৃষি সেক্টর দিনে দিনে হুমকির মুখে পড়ছে যা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি করেছে। তাই কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, কৃষকের অবস্থা এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্যে নিজ নিজ উদ্যেগে দায়িত্বশীলদের কাজ করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত কৃষি ও মৎস সেক্টরের দায়িত্বশীলদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম সভাপতির বক্তব্য এই কথা বলেন।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, কৃষি ও মৎস সেক্টরের সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রমিক নেতা গোলাম রাব্বানী, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাসান রাজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, কৃষি শ্রমিক নেতা রেজাউল করীম, নুরুন্নবী প্রধান, জামিলুর রহমান,শামসুল ইসলাম ও খালেদ হাসান জুম্মন প্রমুখ।
তিনি অারো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে কৃষিকাজ লাভজনক হলেও বাংলাদেশের কৃষকরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।বাংলাদেশে ভোক্তারা চায় কম দামে কৃষি পণ্য ক্রয় করতে আর কৃষকরা চায় লাভজনক দাম। এ দুয়ের দ্ধন্ধ নিরসণ করতে হয় সরকারকে অথচ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্রমাগত অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং দলীয় সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে কৃষক ন্যায্য মূল্যে থেকে বঞ্চিত। শুধু তাই নয় ধান কাটার শ্রমিকের মূল্যের চেয়ে ধানের দাম কম হওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন দিয়েছে কৃষক। এর চেয়ে হৃদয় বিদারক দৃশ্য আর কিছুই হতে পারে না। কৃষকের এমন অভিনব প্রতিবাদের পরও সরকার ধান সহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং ধানের মূল্য নিয়ে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রীসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যও অনেকটাই দায়সারা ছিলো।
তিনি আরো বলেন, অনেক সময় ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফার লোভে মিথ্যা বলে মানহীন বীজ কিংবা অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি করে যাতে করে কৃষক ক্ষতির স্বীকার হয়। এদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ নানাবিধ কারণে ফসলের ক্ষতি হলেও কৃষক কোনো সরকারি সাহায্যও পায় না আবার অনুদান আসলেও দুর্নীতির কারণে তা কৃষকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছায়না। তাই দেশের কৃষকরা সকল ক্ষেত্রেইে আজ অবহেলিত। এই অবহেলিত কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নে দায়িত্বশীলদেরকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন,কৃষক সমাজকে বুঝাতে হবে এক মাত্র ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন হলেই তাদের ন্যায্য অধিকার, দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি সম্ভব। এছাড়া কৃষি সেক্টরে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য আদায়ে কৃষকদের কে সংগঠিত করে তাদের জীবন মান উন্নয়নে দায়িত্বশীলদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরে মতবিনিময় সভায় সকলের সম্মতিক্রমে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবী জানানো হয়:
১. কৃষক বান্ধব জাতীয় কৃষি নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. সার, কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্য কমাতে হবে।
৩.কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
৪. উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা এবং ঝামেলাহীন ভাবে বিক্রির জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
৫. সরকারি উদ্যোগে শাকসবজিসহ পচনশীল কৃষিপণ্যের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে।
৬. কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, এ জন্য সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৭. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষকের কৃষি ঋণ মৌকুফ করতে হবে।
৮.কল কারখানার ক্ষতিকর বর্জ থেকে ফসলি জমি ও পানি রক্ষা করতে হবে।
৯.ফসলি জমি সংরক্ষণ করতে হবে।
১০.কৃষকের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোন কৃষিপণ্যে আমদানি করা যাবেনা।