প্রবল বৈরী বাতাসে সমুদ্রের একটি ঢেউ তীরে আছড়ে পড়তে না পড়তেই আর একটি ঢেউ এসে আঘাত হানে। প্রকৃতির এ খেলায় কারো জীবন ভাঙে কারো জীবন গড়ে। জীবনের ওঠানামায় পৃথিবী থেমে থাকে না। করোনার ধাক্কায় পৃথিবীর মানুষের কর্মমুখরতা কখনো স্থবির হয় কখনো আবার একটু সচল হয়। পৃথিবীর জনপদ হতে জনপদে কোলাহল আর কর্মচাঞ্চল্য থামে কিন্তু জীবনের প্রয়োজন থেমে থাকে না। ওমিক্রন নামে করোনার তৃতীয় ধাক্কা বর্তমানে চলমান। তৃতীয় আক্রমণটি এসেছে নতুন নামে নতুন চেহারায়। করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে এর প্রভাব শ্রমজীবী আর নিরন্ন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি অনুভুত হচ্ছে। এটা সমুদ্রের সেই ঢেউয়ের মতো, প্রথমে ছোট ছোট ঢেউ আসে এরপর বড়ো বড়ো ঢেউয়ের ধাক্কা তীরের দিকে ধেয়ে আসে। ঢেউগুলো সমুদ্র তীরবর্তী অনেক কিছুকেই নিমিষে নাই করে দেয়। গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডে এখন কোনো দেশ কারো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এক দেশের মন্দা অপর দেশে আঘাত হানে। চলমান করোনাকালীন মন্দা এবং সমস্যা বৈশ্বিক; এটা কোনো একক দেশে সীমিত নেই। আশংকা করা হচ্ছে অর্থনৈতিক এই মন্দার প্রভাব বহমান থাকবে অনেক দিন। বিশ্ব অর্থনীতির শক্তিশালী দেশগুলো এই মন্দা নিয়ে চিন্তিত। বিশ্ব অর্থনীতিও একদিন সোজা হয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু চলমান মন্দা নিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ চিন্তিত। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রগুলোর জন্য এ সমস্যা মোকাবিলা আরো বেশি কঠিন। এ নিয়ে চিন্তিত অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরাসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। ২০২০ সাল এবং ২০২১ সালের এই দুই বছরে বেশ কয়েকবার লকডাউন দেয়া হয়েছে কিন্তু করোনা সংক্রমণ থামেনি। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা অর্থনীতির দূরাবস্থা মোকাবিলা নিয়ে।
বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীরা হয়তো ব্যাংক ঋণে রেয়াত পাবে, তারা প্রণোদনা পাবে এবং খেলাপী ঋণের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য অতিরিক্ত সুবিধা পাবে। কিন্তু খেটে খাওয়া শ্রমিকদের জীবন আজ বড়োই বিপন্ন। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তারা তো প্রণোদনা আর রেয়াতের কথা চিন্তা করতে পারে না। করোনায় বহু ছোট এবং মাঝারী কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ পুঁজিহীন হয়ে গেছে। দোকানদার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পেশা বদল করেও দুবেলার অন্ন সংস্থান করতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। জীবন তাদের বড়ো বেদনার এবং কষ্টের। প্রায়ই আমরা সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর দেখতে পাই, একাধারে দুই/তিন দিন ঘরে চুলো জলে না-এরকম সংবাদ। সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং দানশীল ব্যক্তিরা এ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিনের বাজার দিয়ে তো আর পুরো মাস কিংবা বছরের সমস্যা সামাল দেয়া সম্ভব নয়। করোনায় যে সকল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার শ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে, বড়ো বড়ো কারখানায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের সবচেয়ে বড়ো কারখানা সিনহা গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। বহুদিন যাবত নাকি এ প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়ে আসছিলো, করোনাকালীন সময়ে তাদের বিদেশী ক্রেতাদের ওয়ার্কঅর্ডার কমে গিয়েছিলো আশংকাজনক হারে। রাজধানীর প্রবেশদার কাঁচপুরে তাদের বিশাল স্থাপনা যে কারো নজর কাড়ে। সকাল সন্ধ্যায় এ কারখানার শ্রমিকদের আসা যাওয়ায় পুরো এলাকা মুখরিত থাকতো। এ গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করে আরো অনেক ছোট-খাটো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিলো। একটি গার্মেন্টস এর ত্রিশ হাজার কর্মী একই সময়ে চাকুরি হারিয়ে বেকার হয়ে গেলো। এ সকল অসহায় শ্রমিকদের কাছে করোনা আতংকের চেয়ে ক্ষুধার আতংক বেশি ভয়ের। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরাও এটি ধারণা করছেন যে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে করোনায় মৃত্যুর চেয়ে ক্ষুধায় মৃত্যুর হার বাড়তে পারে। বর্তমানে অফ্রিকার অনেকগুলো দেশে চরম দারিদ্র এবং খাদ্য সংকট চলছে। চাপিয়ে দেয়া এবং ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধের কারণে ইয়েমেন, সিরিয়াসহ বেশ কিছু দেশে চরম দুর্ভিক্ষ চলছে। করোনার মহামন্দা এ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে এটা নিশ্চিৎ করেই বলা যায়।
ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি সকল খাতের সাথে যাদের জীবন ওৎপ্রোতভাবে জড়িত তারা হচ্ছে শ্রমিক। তাদের ঘামেই গড়ে ওঠে সভ্যতার মিনার। বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকরা যে পরিমাণ কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে সে তুলনায় তারা কখনোই তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পায় না। করোনাকালীন এ সময়ে আমরা কৃষি শ্রমিকদের হাহাকার দেখেছি। পরিবহন এবং বাজার সচল না থাকার কারণে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। আম চাষীদের আম তাদের বাগানে নষ্ট হয়েছে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এগুলো বিক্রি করতে হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌলিক খাতগুলো হচ্ছে কৃষি, শিল্প এবং সেবাখাত। কৃষির সাথে অনেকগুলো বিষয় জড়িত, কৃষি উপকরণ, সার, বীজ, কিটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। শিল্প খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, রি- রোলিং, পেপার, ইত্যাদি। শিল্পের অন্যতম একটি খাত নির্মাণ এ সেক্টরে কাজ না থাকা কোনো ক্ষেত্রে প্রজেক্ট সাময়িক বন্ধ থাকাও বড়ো সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থনীতির প্রতিটি খাতের ওঠানামার সাথে শ্রমিকদের জীবন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
বহু শ্রমিকের করুণ কান্নাগুলো আমাদের কারো হৃদয়ে দাগ কাটে। কেউ সামান্য সমবেদনা জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। অবশ্য উদ্যমী কিছু লোকের উদ্যোগ আমাদের মনে আশার সঞ্চার করেছে, কিন্তু সামগ্রিক বাস্তবতায় উদ্যোগের তুলনায় চাহিদার ফিরিস্তি যে অনেক বড়ো। লকডাউন চলাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিও অনেকেরই নজরে এসেছে। এক সুঠামদেহী যুবক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দুহাত জোর করে বলছে ‘আমি বাসের স্টাফ, কয়েকদিন যাবৎ আমার ঘরে কোনো চাল নেই, সন্তানরা না খেয়ে আছে,আমাকে একটু সাহায্য করুন’ বিভিন্ন টিভি নিউজে বহু শ্রমিকের সাক্ষাৎকার প্রদর্শিত হয়েছে। দূরপাল্লার বাসের ড্রাইভার সন্তানদের কান্না আর ক্ষুধা মেটাতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন, কিন্তু ভাগ্য এখানেও তাকে হতাশ করেছে। যাত্রী না থাকায় তেমন কোনো অর্থ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি। জীবনের বাস্তবতা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে করে যারা জীবনের ঘানি টানেন তারা বোঝেন জীবনের মানে কী। লকডাউন আর শাট ডাউনে এখনো যারা গার্মেন্টস আর টেক্সটাইল সেক্টরে চাকুরী ধরে রাখতে পেরেছেন, এটা তাদের জন্য বড় সৌভাগ্য। তাইতো কারখানা খোলার সংবাদ কানে পৌঁছা মাত্র তারা যে যেখানে যে অবস্থায় থাকে কর্মস্থলের দিকে ছুটে চলে। কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ, এরই মাঝে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশা আর অটোবাইকে করে শত মাইল পাড়ি দিয়ে তারা ডিউটিতে ফেরে, যার করুণ রূপ আমার দেখেছি আগস্ট-২০২১ সালে। ঈদের ছুটিতে যখন সকল শ্রমিকরা বাড়ি গিয়েছিলো লকডাউন চলমান অবস্থায় গার্মেন্টস মালিকগণ ঘোষণা দিলো আগামী কালের মধ্যে ডিউটিতে ফিরতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাছে করোনা আতংকের চেয়ে ক্ষুধার আতংক বড় বেশি ভয়াবহ মনে হয়। তাই তো তারা পরিমরি করে যার যার কর্মস্থলে ফিরেছে। রোদ,বৃষ্টি, যানবাহনের অভাব তাদের এ ছুটে চলাকে থামাতে পারেনি।
করোনার তৃতীয় ঢেউ ওমিক্রন অনেক দেশকে নতুন করে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে। আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে বেশ কয়েকদিন যাব। করোনা সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে নভেম্বর‘২১-এর প্রথম সপ্তাহের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে তিনদিন অনবরত বৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজি, আলু, পেয়াজ, রসুন, মরিচ এবং মসলা চাষীদের সকল ফসল খেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি শ্রমিকরা বৈরী আবহাওয়ায় আর একবার বড়ো ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। দরিদ্র অসহায় শ্রমিকদের জীবনে বিপদ যেন একটি পর একটি আছড়ে পড়ছে সুতো ছেড়া মালার মতো।
করোনাকালীন সময়ে যারা চাকুরী হারিয়েছে কিংবা কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর বড়ো কোনো উদ্যোগ পরিদৃষ্ট হয়নি। কিছু কিছু শ্রমিক সংগঠনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণের খন্ড চিত্র পরিদৃষ্ট হলেও সমম্বিত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিবহন শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি চাঁদা দেয়। নামে বেনামে তাদের কাছ থেকে বহু ধরনের চাঁদা আদায় করা হয়। কিন্ত লকডাউনে তারা কোনো ক্ষতিপূরণ কিংবা অর্থ সহায়তা পায়নি। তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে সকল শ্রম সেক্টর মিলিয়ে মোট ৮,৫৫১টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এ ট্রেড ইউনিয়নের সবগুলো আবার সক্রিয় নয়। তার চেয়েও বড়ো সমস্যা বেশির ভাগ শ্রমিকই ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে মোট শ্রমিক সংখ্যার মাত্র ৪.২ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য। পরিবহন সেক্টরের মোট শ্রমিকের ৩৫.২ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট, তৈরী পোশাক শিল্পে ১১.৬ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ৬.৯ শতাংশ এবং পাট শিল্পে ৪.৬ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নসমূহের তালিকাভুক্ত সদস্য। ঢাকা শহরে বিপুল সংখ্যক হকার এবং দোকান কর্মচারী রয়েছে। হকারদের মধ্যে ৩৫-৪০% ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলেও তারা তাদের ইউনিয়নসমূহ হতে তেমন কোনো সুবিধা পায়নি। দোকান কর্মচারীদের ২-৩% কোনো কোনো শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য বাকীরা কোন সংগঠনের সদস্য নন। বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে অনেক শক্তিশালী মনে হলেও শ্রমিকদের জীবন জিবিকার প্রশ্নে এবং তাদের সংকটকালে প্রভাব বিস্তারের ভূমিকা কমই রাখতে পারে। আরব বসন্তের শুরুতে তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং সূচনায় সে দেশের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের ভূমিকা ছিল সর্বাগ্রে। সুদান, তিউনিসিয়াসহ অনেকগুলো দেশে শ্রমিক সংগঠনগুলো এতো শক্তিশালী যে তাদের সাথে আলোচনা ব্যতীত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বড়ো কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারে না। বাংলাদেশে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে শ্রমিক সংগঠনগুলো শুধুমাত্র শ্রমিকদের জন্য হতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের পদে যারা আছেন তারা সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থ সুবিধার চেয়ে নিজেদের স্বার্থ সুবিধাকে প্রাধান্য দেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের শ্লোগান সর্বস্ব কিছু কর্মসূচি দ্বারা ট্রেড ইউনিয়নগুলো তাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। তাদের জীবন-জীবিকা, চিকিৎসা, কর্মহীন হলে আপদকালীন সমস্যা সমাধান, বিনা কারণে চাকুরিচ্যুত করা হলে তার সমাধানসহ করোনা মহামারীর মতো সংকটকালীন সময়ে যাতে শ্রমিক সংগঠনগুলো ভূমিকা পালন করতে পারে এ জন্য ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। সকল কারখানা এবং সেক্টরে শ্রমিকদের এ বিষয়ে সচেতন করা পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেকসই অর্থনীতির ওপর দাড় করাতে হবে। সংকটকালীন সময়ে ২/৪ মাস বন্ধ থাকলেও যেন শ্রমিকরা চাকুরিচ্যুত না হয়, তাদের বেতন ভাতা যেন বন্ধ না হয় এদিকে নজর দেয়া উচিৎ। একইভাবে পরিবহন সেক্টরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে যে চাঁদা আদায় করা হয় তা যাতে শ্রমিকদের আপদকালীন সময়ে তাদের কল্যাণে ব্যয় হয় এ বিষয়টি নিশ্চিৎ করা অতি আবশ্যক।
সরকার করোনা মহামারী মোকাবিলায় শ্রমিকদের সহায়তার জন্য যে প্রকল্প এবং উদ্যোগ নিয়েছে তাকে একটি সমম্বিত রূপ দিতে হবে। শ্রমিক সহায়তা বা শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। কৃষি, শিল্প এবং সেবাখাতে মোট শ্রমিক সংখ্যা কত তার ডাটাবেজ সরকারের কাছে থাকা বাঞ্ছণীয়। এসব খাতে ঝুঁকিমুক্ত কারখানা এবং ঝুঁকিযুক্ত কারখানার তালিকাসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং শিল্প পুঞ্জের শ্রমিকদের পৃথক তালিকা থাকা অনিবার্য। একটি বিষয়কে বিবেচনায় নিতে হবে যে, গোটা শ্রমিক সমাজই কোনো না কোনোভাবে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। তারা ভ্যাট ট্যাক্স এবং কর দেয় কি না এ প্রশ্ন অবান্তর। তাদের ঘামে আর শ্রমে যে ভিত্তি তৈরী হয় তার সকল সেক্টরই ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে জাতীয় অর্থনীতি সচল রাখছে। তাই শিল্প কারখানা মালিক সরকার এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সম্মিলিত এক উদ্যোগের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ, কর্মহীন বেকার শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার এবং সম্বলহীন অসহায় মানুষের সমস্যা একদিনে সমাধান হবে না। কিন্তু করোনা মহামারীর প্রভাবে শ্রমিকদের জীবনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এ ক্ষতের চিহ্ন দীর্ঘদিন থাকবে। তাই সংকট মোকাবিলায় সমম্বিত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ একান্ত কাম্য।
লেখক: কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন