আমরা মানুষ হিসাবে সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ শুধুমাত্র নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে না। বরং সকল সৃষ্টির অধিকার আদায় করে সে জীবন পরিচালনা করবে। দরিদ্রদের অধিকার আদায় করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। ফকির মিসকিনরা যখন আমাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তখন আমরা বলি, মাফ করেন! আমরা কি অপরাধ করেছি ? যে তাদের কাছে মাফ চাইতে হবে ? আসলে আমরা অপরাধ করেছি। কেননা আমাদের সম্পদে তাদের হক্ক আল্লাহ তায়ালা দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের সম্পদ থেকে তাদের হক্ক চাহিবা মাত্র দিতে পারিনি বলে তাদের কাছে মাফ চাচ্ছি আমরা, দেখুন না! কুরআন কি বলে – وَ اَمَّا السَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ – وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ আর আপনি সাহায্য প্রার্থীকে ধমক দিবেন না। আর আপনার প্রভূর দেয়া নেয়ামতের কথা স্বরণ করুন। (সূরা দুহা : ১০-১১)। দেখুন, নফল সাদাকাহ এর জন্য এত কঠোর ভাষা, তাহলে ফরয সাদাকাহ বা যাকাতের ব্যাপারে তো আরো কঠোর হুশিয়ারী রয়েছে। বিশেষ করে আমরা বাংলাদেশের মুসলমানরা জমির উৎপাদিত ফসলের উশর দেই না বললেই চলে। আমরা জানিই না উশরের বিষয়ে। তাই বাংলাদেশের মুসলমানদের সতর্ক করার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করে উশরের উপর লিখতে শুরু করলাম।
উশর কি
উশর শব্দটি আরবি, যার অর্থ একদশমাংশ। সাধারণত আমরা ফসলের যাকাতকে উশর বলে থাকি। যে কোন ফল বা ফসলের যাকাতই উশর। ফরজ হিসেবে উশর বা এক-দশমাংশ আর নিসফু উশর বা এক বিশমাংশ ফল বা ফসলের যাকাত আদায় করতে হয়। সাধারণত বৃষ্টি বা ঝরনার পানিতে উৎপাদিত ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ আর সেচ দেয়া পানিতে ২০ ভাগের ১ভাগ ফসল বা সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে যাকাত আদায় করতে হবে।
উশর আদায় করা ফরজ
আল্লাহ তায়ালা জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের যাকাত আদায় করা ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগন, তোমরা যা উপার্জন করো এবং আমি যা তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপাদন করে দেই, তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় করো। অর্থাৎ যাকাত দাও। আর তার নিকৃষ্ট বস্তু বা অংশ ব্যয় করার সংকল্প করো না। অথচ তোমরা তা গ্রহন করো না যদি তোমরা চক্ষু বন্ধ করে থাকো। আর জেনে রাখ আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সূরা বাকারা : ২৬৭)
উশর আদায় করা যে ফরজ তা আমাদের অনেকেই জানি না। রাসূল (সা.) তার সময়ে সাহাবাদের পাঠিয়ে উশর আদায় করতেন। আমরা অনেকে মনে করি, উশর শুধু ফসলের উপর, ফলের উপর নেই। ফসল ও ফল উভয় থেকে উশর আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন: তিনি আল্লাহই নানা প্রকার লতাগুল্ম ও বাগান সৃষ্টি করেছেন। খেজুর বীথি সৃষ্টি করেছেন। শস্য উৎপাদন করেছেন, তা থেকে নানা প্রকার খাদ্য সংগৃহীত হয়। যাইতুন ও ডালিম বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন, এদের ফলের মধ্যে বাহ্যিক সাদৃশ্য থাকলেও স্বাদ বিভিন্ন। এগুলোর ফল খাও যখন ফলবান হয় এবং এগুলোর ফসল কাটার সময় আল্লাহর হক আদায় করো আর সীমা অতিক্রম করো না। কারণ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে আল্লাহ পছ্ন্দ করেন না। (সূরা আনয়াম : ১৪১)
সুতরাং আলোচ্য আয়াতে কারীমাদ্বয়ে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ফসল ও ফলের যাকাত তথা উশর আদায় করা ফরজ। তাই আমরা ফসল ও ফলের যাকাত আদায় করব। ইনশা-আল্লাহ।
কোন কোন ফসল ও ফলের যাকাত দিতে হবে
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি উৎপাদিত সকল ফসল ও ফলের যাকাত দিতে হবে। তারপরেও আমরা হাদীসের আলোকে কিছু কথা বলব, পরবর্তীতে ফকীহদের মতামত উল্লেখ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবো ইনশা-আল্লাহ। সাধারনত আরবে যে ফসলগুলো বেশি উৎপাদন হতো তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন – মূসা ইবনে তালহা বলেন, আমাদের কাছে মুয়াজ ইবনে জাবালের একটি চিঠি আসে। যেখানে তিনি রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি শুধু গম, যব, কিসমিস ও খেজুরের যাকাত গ্রহন করেছেন। (হাকিম আল মুসতাদরাক : ১/৫৫৮ )
হযরত আবু সাইয়ারাহ (রা.) বলেন , আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ! আমার কিছু মৌমাছির চাষ আছে। তিনি বললেন, তুমি (উৎপাদিত মধুর) উশর আদায় করবে। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার মধু চাষের ভূমিকে সংরক্ষিত করে দিন। তিনি তখন তা সংরক্ষিত ভূমি বলে নির্দেশ প্রদান করেন। (ইবনু মাজাহ : ১৮২৩)
উৎপাদিত শাক সবজিতে যাকাত দিতে হবে না
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছে চিঠি লিখে জানতে চাইলে, উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, ليس فيها شيء শাক সবজিতে কোন যাকাত নেই। (তিরমিযি : ৬৩৮) ইমাম আযম আবু হানিফা (র.) এর মতে, উৎপাদিত সকল শস্যের উপর উশর বা যাকাত দিতে হবে। তবে, তারই ছাত্রদ্বয় ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদসহ সকল ইমামের মতে, যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষন করা যায় না, তার উপর উশর বা যাকাত দিতে হবে না। সে জাতীয় উৎপাদিত জিনিস ঘাস, তরমুজ, শশা, লাউ, কুমড়াসহ নানা রকম সবজি যা সাধারনত আমরা পারিবারিকভাবে খাওয়ার জন্য উৎপন্ন করে থাকি। মনে রাখতে হবে, ব্যবসায়ীক বা বানিজ্যিকভাবে যা আমরা উৎপন্ন করি তার অবশ্যই উশর বা যাকাত দিতে হবে। যে সকল উৎপন্ন দ্রব্য সংরক্ষন করা যায়, অবশ্যই তার উশর বা যাকাত আদায় করতে হবে। ধান, গম, যব, ভুট্টা, ডাল, বাদাম, পেস্তা, আখরোট, যাফরান, মেহেদী, যাইতুন, ধনে বা মশলা জাতীয় দ্রব্যসহ, ফল, বীচি ও শস্য জাতীয় সকল উৎপাদন। আল কুরআন ও হাদীসের তথ্যের উপর ভিত্তি করে ইমাম আবু হানীফা (র.) বলেন, জমি যা উৎপাদন করবে, তাতেই উশর বা অর্ধ উশর প্রদান করতে হবে। তাই আমরা বলতে পারি ফসল, মধু ও ব্যবসায়ীকভাবে উৎপন্ন মাছ, মধু, শাকসবজি, ফলসহ বাংলাদেশের সকল প্রকার ভূমিজ উৎপাদনের যাকাত বা উশর প্রদান করতে হবে।
সর্বনিম্ম উৎপন্নের যাকাত
ভূমি বা জমিতে উৎপন্ন হলেই যাকাত দিতে হবে। তবে সর্বনি¤œ কতটুকু হলে যাকাত দিতে হবে। এই বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। ইমামে আযম আবু হানিফা (র.) বলেন, যাই উৎপন্ন হোক আর যতটুকু উৎপন্ন হোক সবটুকুর যাকাত দিতে হবে। তার মতে ঘাস, খড়, গাছের ডালপালা, আগাছা, কলাগাছ ও কঞ্চি জাতীয় গাছ, যা আগাছা হিসাবে পরিচিত, তা ছাড়া বাকি সকল উৎপাদনের যাকাত দিতে হবে। তবে ব্যবসার জন্য এগুলো চাষ করলে যাকাত বা উশর দিতে হবে। তবে অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী, পরবর্তী ফকীহ ও ইমামগণ মনে করেন, যেকোন ফসল ৫ ওয়াসাক এর কম হলে যাকাত দেয়া লাগবে না। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুরের যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়ার কম রৌপ্যের যাকাত নেই, পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। (বুখারি : ১৩৯০) আরেক বর্ণনায় দেখা যায়, ليس فيما دون خمسة أوسقٍ مِن التمر
পাঁচ ওয়াসাকের কম ফল বা ফসলে যাকাত নেই। (মুসলিম : ৯৭৯)
সুতরাং বলা যায় ইমাম আবু হানিফার মতে, যা উৎপাদন হবে তার যাকাত দিতে হবে। তিনি সর্বনি¤œ কোন পরিমান হিসেব করেননি। আর অন্য ইমামদের মতে সর্বনি¤œ পাঁচ ওয়াসাক হলে যাকাত দিতে হবে। এখন আসুন পাঁচ ওয়াসাক বাংলাদেশের হিসাবে কতটুকু ? এ বিষয়ে সকলে একমত যে, এক ওয়াসাক হলো ৬০সা’। এই সা’ হলো বেতের তৈরি এক প্রকারের পরিমাপক পাত্র। দেশের পার্থক্যের কারনে সা’ এর আকৃতিতেও ভিন্নতা দেখা দেয়। ইরাক ও তদ্বীয় অঞ্চলে এক সা’ সমান ৮ রতল ছিল। আধুনিক পরিমাপ হিসাবে ১ রতল সমান ৪১২.১ গ্রাম। সুতরাং ইমাম আবু হানিফা ও ইরাকের হিসাব অনুযায়ী এক সা’ সমান ৩২৯৬.৮ গ্রাম। আর এক ওয়াসাক সমান ৩২৯৬.৮*৬০ = ১৯৭৮০৮ গ্রাম এবং ৫ ওয়াসাক সমান ১৯৭৮০৮*৫=৯৭৮০৮ গ্রাম বা ৯৯০ কিলোগ্রাম বা ২৫ মন (৪০ কেজি = ১মন হিসেবে)। এটা হলো ইরাক ও এতদঞ্চলের ইমামদের মতানুসারে, তাদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মুহাম্মদ (র.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অপরপক্ষে ইমাম আবু ইউসুফ, শাফেয়ী, মালেকী ও আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) সহ মদীনা ও তদ্বীয় অঞ্চলের ইমামদের মতে এক সা’ সমান ২১৭৫ গ্রাম। সে হিসাবে এক ওয়াসাক সমান ১৩০৫০০ গ্রাম। ৫ ওয়াসাক ১৩০৫০০*৫=৬৫২৫০০ বা ৬৫৩ কিলোগ্রাম বা প্রায় ১৭ মন। তাই আমরা বলতে পারি, সাহাবা ও মদীনার হিসাব ধরলে কারো জমিতে সর্বনি¤œ ১৭ মন ফসল হলে তাকে উশর দিতে হবে।
উশর কে ও কখন দেবে
যিনি চাষ করেন তিনিই ফসলের উশর বা যাকাত আদায় করবেন। ১ খন্ড জমিতে সর্বনি¤œ ১৭ মন ফসল উৎপন্ন হলে উশর দিতে হবে তা নয় বরং কৃষক যত খন্ড জমি চাষ করুক না কেন, সকল জমি মিলে সর্বনিম্ম ১৭ মন ফল বা ফসল উৎপন্ন হলে তাকে যাকাত দিতে হবে। কৃষক যদি বর্গাচাষী হয়, তাহলে জমির মালিকের সাথে ফসল ভাগ করার আগেই মোট ফসল থেকে উশর আদায় করতে হবে। অথবা দুই পক্ষ ভাগ করে নেয়ার পর স্ব স্ব ভাগ থেকে উশর আদায় করেও নিতে পারেন তবে প্রথমটাই উত্তম। উশর কখন আদায় করতে হবে তা কুরআন সু-স্পষ্ট করে দিয়েছে – আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন মাচার উপর উঠানো হয় ও যা মাচার উপর উঠানো হয় না উভয় প্রকারের উদ্যানসমূহ। আর খেজুর বৃক্ষসমূহ ও শষ্যক্ষেত্র। যার স্বাদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নতা। আর জলপাই ও বেদানা যা একটির সাথে অন্যটির সাদৃশ্যপূর্ণ হয় ও সাদৃশ্যহীনও হয়। যখন বৃক্ষ ফলবান হয় তখন তোমরা তা থেকে ফল খাও আর তা মাড়াইয়ের বা কর্তনের দিনে দরিদ্রদের অধিকার পরিশোধ করো। আর অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীদের আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন না। ( সূরা আনয়াম : ১৪১)
আমরা বুঝতে পারলাম যে, যেদিন ফল কাটবো ও ফসল মাড়াই করব, ঘরে তোলার আগেই ফল ও ফসলের যাকাত আদায় করে দিতে হবে।
উশর কাকে দেবেন
স্বাভাবিকভাবে উশর মানে ফসলের যাকাত। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যাকাত বা উশর আদায়ের কর্মচারীগণ উশর আদায় করবেন। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনুপস্থিতে (বর্তমানে বাংলাদেশে) ব্যক্তিগতভাবে উশর আদায় করে দিতে হবে। কুরআনে বর্ণিত খাত গুলো হলো-
নিশ্চয় যাকাত শুধু অভাবী, স্বম্বলহীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারীগণ, যাদের অন্তর ইসলামের জন্য আকর্ষিত করতে হবে তাদের জন্য, দাস মুক্তি, ঋণগ্রস্থ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ও মুসাফিরদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ : ৬০)
উপরে বর্ণিত খাতগুলোতেই উশর আদায় করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলে ব্যক্তিগতভাবে উশর আদায় করা যাবে না। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আদায় করেন, রাষ্ট্রীয় কর্মচারীরা গেলে পুনরায় আদায় করতে হবে।
কি হারে উশর আদায় করতে হবে
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি সর্বনিম্ম ১৭ মন ফল বা ফসল হলে যাকাত বা উশর আদায় করতে হবে। ১৭ মনের কম হলে দিতে হবে না। ১৭ মনের চেয়ে বেশি উৎপন্ন হলে ১ কেজি থেকে হিসেব করে উশর আদায় করতে হবে। আর উশর আদায়ের হার কেমন হবে তা আমরা রাসূল (সা.) এর হাদীস থেকে দেখতে পাই। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন – বৃষ্টির পানি, প্রবাহিত ঝরনার পানি বা মাটির আদ্রর্তা থেকে কোন সেচ ব্যবহার ছাড়া যে ফল বা ফসল উৎপাদিত হয়। সে ফল বা ফসলের এক দশমাংশ (১০%) উশর বা যাকাত প্রদান করতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে যে ফল বা ফসল উৎপন্ন হয় তা থেকে এক দশমাংশের অর্ধেক (২০ ভাগের ১ ভাগ বা ৫%) যাকাত প্রদান করতে হবে। (বুখারি : ১৪১২) বৃষ্টির পানি, নদীর পানি, ঝরনার পানি বা মাটির আদ্রর্তা থেকে যা উৎপাদিত হয় তা থেকে উশর বা ১০ ভাগের একভাগ যাকাত প্রদান করতে হবে। পশু বা যন্ত্র ব্যবহার করে সেচের মাধ্যমে যা উৎপন্ন হয় তা থেকে ২০/১ ভাগ যাকাত দিতে হবে। (নাসায়ী : ২৪৮৭)
মনে রাখতে হবে, কেউ জমির খাজনা দিলে উশর মাফ হয়ে যায় না। খাজনা রাষ্ট্র অনৈসলামিকভাবে আদায় করছে। তাতে আল্লাহর দেয়া নির্ধারিত বিধান রহিত হবে না।
উশর আদায় না করার পরিনতি
আমরা আগেই বলেছি উশর মানে ফসলের যাকাত। কেউ উশর বা যাকাত আদায় না করলে তাকে ভয়াবহ পরিনতির সম্মুখিন হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জিভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না। তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সংবাদ দাও। যেদিন জামান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বে এবং পিঠে সেক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো। (সূরা তাওবা : ৩৫-৩৬) রাসূল (সা.) বলেছেন, সোনা রূপার মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করেন, তবে কিয়ামতের দিন এ ধনসম্পদকে আগুনের পাত বানানো হবে এবং জাহান্নামের আগুনে তা উত্যপ্ত করা হবে। তারপর এগুলো দ্বারা তার পার্শ্ব, ললাট ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। এমন একদিন যেদিনের পরিমাণ দুনিয়ার ৫০ হাজার বছরের সমান হবে। এভাবে বান্দার পরিনতি জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তি চলতে থাকবে। (মুসলিম : ৯৮৭)
রাসূল (সা.) আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি। কিয়ামতের দিন তার সেই সম্পদকে টেকো মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি তার গলায় মালা পরিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড় দিয়ে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ। (বুখারি : ১৪০৩)। হাদীসটি পড়ে রাসূল (সা.) কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন, আর মহান আল্লাহ তার অনুগ্রহ থেকে তাকে যা দান করেছেন, তা নিয়ে যারা কৃপনতা করে তারা যেন ধারনা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপনতা করেছিল। কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পড়ানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহর জন্য। আর তোমরা যা আমল করো, সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সম্যক জ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান : ১৮০)
সুতরাং উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে উশরের বিধান ও উশর আদায় না করার পরিনতি সম্পর্কে আমরা সম্যক ধারনা লাভ করতে পারি। তাই আসুন নিজেরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচি, সাথে সাথে সমাজে শৃঙ্খলা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে দরিদ্রের হক উশর বা যাকাত তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেই। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল প্রচেষ্টা জান্নাত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কবুল করুন। আমীন
লেখক : সাবেক আহবায়ক, বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ।